নিজের থানার মামলা তো আছেই, এর বাইরে বিভিন্ন থানায় দায়ের হওয়া স্পর্শকাতর মামলার রহস্য উদঘাটনে নিয়মিত ছুটতে হয় বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম মহিউদ্দিন সেলিমকে। সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম মহানগরীতে চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী সূত্রবিহীন অন্ত:ত তিনটি ঘটনার রহস্য উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি।
এর মাধ্যমে নিজের কর্মদক্ষতায় উৎরে গেছেন, আস্থায় এসেছেন সিএমপি কমিশনার মো.ইকবাল বাহারের, মিলেছে দক্ষতার স্বীকৃতি। একেএম মহিউদ্দিন সেলিম এখন সিএমপির ‘বেস্ট ইন্সপেক্টর’।
মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) মাসিক অপরাধ সভায় সিএমপি কমিশনার মো.ইকবাল বাহার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিমের হাতে সনদপত্র ও নগদ টাকা তুলে দেন।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (জনসংযোগ) আনোয়ার হোসেন বলেন, চাঞ্চল্যকর মামলা নিষ্পত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় বন্দর থানার ওসি চট্টগ্রাম মহানগরীতে সেরা ওসি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
চলতি বছরের ৯ এপ্রিল মো.ইকবাল বাহার সিএমপি কমিশনার হিসেবে যোগ দেন। যোগদানের পরই তিনি নম্বরের ভিত্তিতে পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের কর্মকাণ্ড মূল্যায়নের পদ্ধতি চালু করেন।
পাঁচটি ক্যাটাগরিতে পুলিশ সদস্যদের নম্বর দেয়া হয়। ক্যাটাগরিগুলো হচ্ছে গ্রেফতার, মাদক উদ্ধার, অস্ত্র-বিস্ফোরক উদ্ধার, অন্যান্য (চোরাই গাড়ি, জাল টাকা, স্বর্ণ, শাড়িসহ বিবিধ) মালামাল উদ্ধার এবং মামলা নিষ্পত্তি ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত পুলিশের নিজস্ব কার্যক্রম।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বন্দর থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, জনগণের পাশে থেকে সমাজ ও দেশকে অপরাধমুক্ত করার শপথ নিয়েই পুলিশের পেশায় এসেছি। আমি সবসময় আমার পেশায় নিজের সর্বোচ্চটুকু দেয়ার চেষ্টা করি। বেস্ট অফিসারের স্বীকৃতির মাধ্যমে আমি আরও ভাল কাজ করার উৎসাহ পেয়েছি।
শুধু চাঞ্চল্যকর মামলা নিষ্পত্তি নয়, পেশায় যোগদানের পর থেকে একেএম মহিউদ্দিন সেলিমের অস্ত্র উদ্ধার এবং তারকা সন্ত্রাসী-অপরাধী গ্রেফতারের ক্ষেত্রেও একেএম মহিউদ্দিন সেলিমের সাফল্যের তালিকাটা দীর্ঘ।
সূত্রমতে, ২০০০ সালের ১২ জুলাই নগরীর বহদ্দারহাটে শিবির ক্যাডারদের ব্রাশফায়ারে ছাত্রলীগের আটজন নেতা-কর্মী খুন হয়। এই হত্যার মিশনে শিবির ক্যাডাররা চারটি একে-৪৭ রাইফেল ব্যবহার করেছিল। চারটির মধ্যে তিনটি একে-৪৭ রাইফেল একাই উদ্ধার করেছিলেন একেএম মহিউদ্দিন সেলিম।
এর মধ্যে দুটি একে-৪৭ রাইফেল, একটি মার্কিন শিজর্ট পিস্তলসহ গ্রেপ্তার করেন দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার ও অস্ত্র ব্যবসায়ী গিয়াস হাজারিকাকে। ২০০০ সালে নগরীর পাহাড়তলীর সিটি গেট এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি একে-২২ রাইফেলসহ গ্রেপ্তার করেছিলেন সেসময়ের আলোচিত রাউজানের বৌদ্ধভিক্ষু হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি এলাইচ মোহাম্মদকে। একই বছর নগরীর গোলপাহাড় মোড়ে বন্দুকযুদ্ধের পর উদ্ধার করা হয় একটি একে-২২ রাইফেল।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পরের দিন অর্থাৎ ২ অক্টোবর বিকেলে নগরীর চালিতাতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি একে-৪৭ রাইফেল, একটি থ্রি নট থ্রি রাইফেল, একটি বুলেট প্রুফ জ্যাকেট এবং বিপুল পরিমাণ গুলিসহ গ্রেপ্তার করেন দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ খান ও আজরাইল দেলোয়ারকে। মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী হত্যা মামলার অন্যতম আসামি তসলিম উদ্দিন ওরফে মন্টুকে একটি একে-৪৭ রাইফেল ও একটি পিস্তল এবং বিপুল পরিমাণ গুলিসহ গ্রেপ্তার করেন তিনি।
২০১১ সালে দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার সরওয়ার ও ম্যাক্সনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে গ্রেফতার করেন একেএম মহিউদ্দিন সেলিম।
মহিউদ্দিন সেলিমের বাবা আবু তাহের মোল্লাও ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। দুই ভাই, চার বোনের মধ্যে সবার বড় এ কে এম মহিউদ্দিন সেলিম ১৯৯০ সালে ক্যাডেট এসআই পদে যোগ দেন। ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি পরিদর্শক হিসেবে পদোন্নতি পান।
একেএম মহিউদ্দিন সেলিমের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা মুরাদনগরের গুঞ্জরে হলেও বাবার চাকরির সূত্র ধরে শিশু এবং শৈশবকাল কেটেছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। যে কারণে স্কুলে পড়া অবস্থায় নিয়মিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করতে হয়েছে তাকে। কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করার পর ভর্তি হন নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় সরকারি কমার্স কলেজে। সেখান থেকে এইচএসসি, বিকম এবং এম কম পাস করেন। বিবাহিত একেএম মহিউদ্দিন সেলিম তিন কন্যা সন্তানের জনক।
No comments:
Post a Comment