Thursday, August 25, 2016

হাসপাতাল থেকে স্ত্রীর লাশ কাঁধে নিয়ে ১০ কি.মি. হাঁটা – আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হল উৎপীড়িত ও বঞ্চিত বুকের ক্রন্দনরোল !

”আমি সেই দিন হব শান্ত যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দনরোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হবেনা” -আমাদের জাতীয় কবি এমন প্রত্যাশার আক্ষেপ নিয়েই নির্বাক হয়ে এই ধরাধাম ত্যাগ করেছেন। কবির সেই আপ্ত বাক্যেরই বিমূর্ত প্রতিচ্ছবি আমরা আজও দেখতে পেলাম আজকের দানা মাঝির মাঝে।


হাসপাতালে মারা গেছেন প্রিয়তমা স্ত্রী। লাশ নিয়ে ফিরতে হবে বাড়িতে। এদিকে অর্থনৈতিকভাবেও স্বচ্ছল নন তিনি। হাসপাতালে অনুরোধ করেও মেলেনি সাহায্য।


কিন্তু স্ত্রীর মরদেহ তো আর ফেলে রাখা যায় না। বাধ্য হয়েই তিনি স্ত্রীর লাশ কাঁধে তুলে নেন; সঙ্গী ১২ বছর বয়সি মেয়ে। এভাবেই স্ত্রীর মরদেহ কাঁধে নিয়ে ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন স্বামী।


ঘটনাটি ঘটেছে, ভারতের উড়িষ্যায়। দানা মাঝির স্ত্রী আমাং দেই যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত ছিলেন। গত মঙ্গলবার ভবানী পাটনার জেলা হেডকোয়ার্টারস হাসপাতালে তিনি মারা যান।


গত ফ্রেব্রুয়ারিতে উড়িষ্যা সরকার ‘মহাপ্রয়াণ’ নামে একটি প্রকল্প চালু করেছে। প্রকল্প অনুযায়ী আর্থিক সামর্থ্যহীন পরিবারের মৃতদেহ হাসপাতাল থেকে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হবে। সেজন্য ৩৭টি সরকারি হাসপাতালে ৪০টি লাশবাহী গাড়িও দেওয়া হয়েছে।


অর্থনৈতিকভাবে অস্বচ্ছল হওয়ায় নিজে কোনো যানবাহনের ব্যবস্থা করতে পারেননি। তাই স্ত্রীর লাশ বাড়িতে নেওয়ার জন্য দানা মাঝি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে সাহায্য চান। কিন্তু নিজের আর্থিক দৈন্যের কথা বলেও কর্তৃপক্ষের মন গলাতে ব্যর্থ হন তিনি।


এদিকে হাসপাতাল থেকে বাড়ির দূরত্ব কিন্তু কম নয়, ৬০ কিলোমিটার। তবুও দানা মাঝি এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন। স্ত্রীর লাশ কাঁধে নিয়েই ১২ বছর বয়সি মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হয়ে যান।


পথে মাঝির এই কাণ্ড দেখে তৈরি হয় চাঞ্চল্য। এরপর স্থানীয় জেলা কালেক্টরকে বিষয়টি অবগত করা হয়। সঙ্গে সঙ্গেই তারা একটি লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেন। এরপর বাকি ৫০ কিলোমিটার পথ অ্যাম্বুলেন্সে করে স্ত্রীর লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরেন দানা মাঝি।

No comments:

Post a Comment