Friday, July 1, 2016

এই মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ কী? বিগ-ব্যাং এ শুরু, বিগ-ক্রাঞ্চে শেষ ?

আমাদের এই মহাবিশ্ব প্রায় ১৩.৭ বিলিয়ন বছরের পুরনো এবং পৃথিবীর বয়স প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর। সুতরাং অদূর ভবিষ্যতে আসলে কী হতে পারে এই মহাবিশ্বে?

 

আজ থেকে প্রায় ৩ বিলিয়ন বছর পূর্বে পৃথিবীতে প্রাণের উদ্ভব হয়েছে। সে প্রাণের উদ্ভবও বিস্ময়কর। পৃথিবীর আদিম জলাশয়ে প্রথম প্রাণের আবির্ভাব ঘটে। তবে কোন বিক্রিয়ায় কোন অনুঘটকের উপস্থিতিতে কোন অনুর অনুরননে অনু-পরমানু-মূলক-যৌগের বিবিধ ক্রিয়া-বিক্রিয়ায় এমন বৃহদাকার অনুর সৃষ্টি হয়েছিল, যা বংশবৃদ্ধি করতে পারে সেটা এখনো অজানা। তবে এই অণুগুলো অধিকতর জটিল কাঠামো সংশ্লেষ করতে পারে। এই বিস্ময়কর বৃহদানুটির নাম ডিএনএ বা ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক এসিড। কিন্তু এককোষী জীব থেকে বহুকোষী জীবে পরিণত হতে লক্ষ লক্ষ বছর লেগে গিয়েছিল। সেজন্যই মানুষের আবির্ভাব অনেক পরেই। প্রায় ১০ লক্ষ বছর আগে।

 

তবে বিগ ব্যাং এর প্রথম বিলিয়ন বছরে মহাবিশ্ব যেরকম চরম ও পরম পরিস্থিতি বিরাজ করছিল তাতে জীবন সৃষ্টি সম্ভব ছিল না। কাজেই মহাবিশ্ব যখনই এমন অবস্থায় উপনীত হয় যে জীবন সৃষ্টি সম্ভব, তখনই আমাদের উদ্ভব হয়েছে।



মহাবিশ্বের বিবর্তন

 

তবে এই উন্মুক্ত মহাবিশ্ব আর কত বিলিয়ন বছর এমন জীবন সৃষ্টি করে যেতে পারবে কে জানে। কারণ সৌরজগৎ আস্তে আস্তে বাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। মহাবিশ্বের বিস্তৃতির সঙ্গে সঙ্গে অন্য সকল নক্ষত্রের মতো সূর্য ক্রমাগত তার হাইড্রোজেন জ্বালানি পুড়িয়ে শেষ করে ফেলছে।

 

কাজেই একসময় এই জ্বালানী শেষ হয়ে যাবে। তখন সূর্যের অভ্যন্তরে শুরু হবে হিলিয়ামের দহন। এই পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ বিকিরণ চাপ ও অভিকর্ষীয় আকর্ষণের টানাপোড়েনে সূর্য বেশ স্ফিত হয়ে যাবে। যা সূর্যের লাল দানব দশা। সেটা শুরু হবে প্রায় ৫০০ কোটি বছর পর। তারপর আরো কয়েকটি পর্যায় অতিক্রম করে সূর্য আরো স্ফিত হয়ে পৃথিবীর নিকটবর্তী হয়ে যাবে এবং পৃথিবীকে গ্রাস করে ফেলতে পারে অথবা সূর্য পৃথিবীর এতই কাছেই চলে আসবে যে পৃথিবীর ওপরিভাগের তাপমাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।

 

এরপর একশ বিলিয়ন বছর পর আমাদের আকাশগঙ্গা ছায়াপথ এবং আন্ড্রোমিডা গালাক্সি মিলিত হয়ে একটি সুপার গালাক্সি তৈরি করবে। এরপর একশ ট্রিলিয়ন বছর পর আমাদের সুপার গালাক্সির বেশিরভাগ তারাই তার জ্বালানী ফুরাবার কারণে নিভে যাবে। সুতরাং তখন নক্ষত্রের তাপ না থাকায় স্পষ্টতই মহাবিশ্ব শীতল হয়ে যাবে। যদিও প্রশ্ন থাকে এই মহাবিশ্বের বর্তমান তাপ কীভাবে কীসে রুপান্তিত হবে। শীতল মহাবিশ্বে কোনো নতুন প্রাণসত্ত্বার উদ্ভব ও বিকাশ সম্ভব হবে না।

 

তারপরও যদি বুদ্ধির প্রয়োগ ঘটিয়ে মানুষ অভিযোজিত হয়ে ততদিন স্পেসে নতুন কলোনি কিংবা বেবি গালাক্সি তৈরি করে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে পারে তাহলে দেখা যাবে অতিদূর ভবিষ্যতের শীতল মহাবিশ্বের বিবর্তিত (সামান্য আবহাওয়ার পার্থক্যে যেখানে পৃথিবীতেই মানুষের চুল, নাক, রঙ, উচ্চতা এমনকি ভাষার বিবর্তন ঘটে সেখানে মহাবিশ্বের এমন পরিস্থিতিতে মানুষের সামগ্রিক বিবর্তন স্বাভাবিক) দেহ এবং সংস্কৃতির চিন্তাশীল অদ্ভুত সত্ত্বাদের কাছে পূর্বের অর্থাৎ আমাদের এখনকার উষ্ণ মহাবিশ্বের ভাবনাটা মোটেও সুখকর হবেনা। আমরা যেহেতু বর্তমানে আমাদের পূর্বের বিস্ফোরণ সম্পর্কে আঁচ করতে পারছি তারাও তেমনি আমাদের সম্পর্কে জানতে পারবে। তাদের কাছে হয়তো আলোকিত মহাবিশ্ব এক দারুন আকাঙ্ক্ষার বস্তু হবে। তাদের মধ্যে সবথেকে কল্পনাপ্রবণেরা আমাদের বর্তমান বিশ্বের এবং আমাদের পৃথিবীর দিকে ফিরে তাকিয়ে একথা ভাবতে পারে যে, অফুরন্ত সূর্যলোক অধ্যুষিত এবং বিলিয়ন বিলিয়ন বছর ধরে শক্তির অফুরন্ত সরবারহে ভরা কী আশ্চর্য এক জগত ছিল- এমন এক স্বপ্নরাজ্য কখনো ফিরে আসবে না!

 

তবে বিজ্ঞানিরা বলছেন, এই শীতল অন্ধকার মহাবিশ্বের সকল তারা, সাদা বামন এবং নিউট্রন তারায় রুপান্তিত হবে যা পর্যাপ্ত দীর্ঘকাল পর কৃষ্ণবিবরে পরিণত হবে এবং হকিং বিকিরণের মাধ্যমে উবে যাবে এবং তখন মহাসঙ্কোচন বা বিগ-ক্রাঞ্চ শুরু হবে। এরপর সংকোচিত হতে হতে বিশ্ব সৃষ্টির এই পর্যন্ত যা ঘটবে তার পুণরাবৃত্তি হবে। অর্থাৎ বিশ্বের সৃষ্টি ও ধ্বংস একটি চক্র মেনে চলে (হয়তো তা পর্যায়ক্রমিক)।

 

তথ্যসূত্র:

• ফ্রম ইটারনিটি টু হিয়ার, শন ক্যারল।
• আওয়ার কসমিক হ্যাবিটাট, মারটিন রিস।
• দ্য ইউনিভার্স ইন এ নাটশেল, স্টিফেন হকিং।
• দ্য আল্টিমেট ফেট অব দ্য ইউনিভার্স, জামাল নজরুল ইসলাম।

• অনলি ডার্কনেস রিমেইন্স, ফারসিম মান্নান।
• স্টারশিপ হিউম্যানিটি, ক্যামেরন স্মিথ।

No comments:

Post a Comment