ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প সমাপ্ত হয়েছে। এর ফলে মাত্র ৪ ঘণ্টায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে ভ্রমণ সম্ভব হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহের দু’টি সম্প্রসারিত চারলেন মহাসড়ক আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন।
প্রধানমন্ত্রী সকাল ১১টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) এক অনুষ্ঠানে বোতাম টিপে দু’টি চারলেন মহাসড়কের উদ্বোধন করবেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প সমাপ্ত হওয়ায় এই পথে যানজট লাঘবের পাশাপাশি দুর্ঘটনা ন্যূনতম পর্যায়ে নেমে আসবে। স্বল্প সময়ে যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানি পরিবহন সহজতর এবং সাশ্রয়ী হবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, তৃতীয় সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্প ব্যয় প্রায় ৩৮১৭ কোটি টাকা। প্রকল্পটিতে বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি জাপান ঋণ মওকুফ তহবিল (জেডিসিএফ) অর্থায়ন করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় দাউদকান্দি থেকে চট্টগ্রামের সিটিগেট পর্যন্ত ১৯০.৪৮ কিলোমিটার অংশকে চারলেনে প্রশস্তকরণ প্রকল্পটি এডিপিভুক্ত অনুমোদিত প্রকল্প। মোট ১৫টি প্যাকেজের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় ২৩টি সেতু নির্মাণ, ২৪২টি কালভার্ট নির্মাণ, ৩টি রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ, ১৪টি সড়ক বাইপাস নির্মাণ, ২টি আন্ডারপাস নির্মাণ, ৩৪টি স্টিল ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ এবং ৬১টি বাস বে নির্মাণ করা হয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর অংশ ইতোমধ্যে ৮ লেনে উন্নীত করা হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা- গতিশীল হওয়ায় এ সড়কের উপর যানবাহন ও পণ্যবাহী পরিবহনের চাপ ক্রমশ বাড়ছে।
এ মহাসড়কে বিদ্যমান কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমত- এ সেতু ৩টি বাড়তি যানবাহনের চাপ মোকাবেলা করতে পারছে না। এ বাস্তবতায় সরকার জাইকার অর্থায়নে বিদ্যমান ৩টি সেতুর পাশে আরো নতুন ৩টি সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করেছে।
ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিবেচনায় নিয়ে সরকার সদ্যসমাপ্ত চারলেন মহাসড়কের পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের প্রস্তুতিমূলক কাজ ইতোমধ্যে শুরু করেছে।
এদিকে জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ৮৭ কিলোমিটার দীর্ঘ চারলেন মহাসড়কের কাজ শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় মহাসড়কটিতে মিডিয়াম নির্মাণসহ ১৫৫টি কালভার্ট, ৫টি নতুন সেতু, ১টি ফ্লাইওভার, ১টি রেল ওভারপাস, পথচারীদের নিরাপদ সড়ক পারাপারের লক্ষ্যে ৪টি স্টিল ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সড়কটির ন্যূনতম প্রশস্ততা ২১ ২ মিটার এবং বাজার ও বাণিজ্যিক অংশে প্রশস্ততা প্রায় ২৫-৩৫ মিটার।
এ সড়কের বিশেষ দিক হলো সড়কের ১০টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বাস বে সহ ৩ হাজার ৪২৫ মিটার কংক্রিট পেভমেন্ট নির্মাণ। যানবাহন চলাচলসহ সড়ক ব্যবহারকারীদের ভ্রমণ নিরাপদ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সাইন সিগন্যাল স্থাপন করা হয়েছে। এতে মহাসড়কটিতে সড়ক দুর্ঘটনা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।
জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক প্রকল্পটি বাস্তবায়নের আগে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যাতায়াত করতে প্রায় ৪ ঘণ্টা সময়ের প্রয়োজন হতো। এখন ভ্রমণ সময় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এছাড়া গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের তৈরি পোশাক বিভিন্ন পণ্য ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে পরিবহন সময় ও ব্যয় কমে এসেছে।
জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত যাতায়াতে মাওনা চৌরাস্তার যানজট ছিল অসহনীয়। প্রকল্পের আওতায় মাওনায় একটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। এতে বর্তমানে যানজট ছাড়াই যাত্রী ও পণ্য পরিবহন সম্ভব হচ্ছে।
অপরদিকে একই সময় ময়মনসিংহ থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ৮৭ কিলোমিটার মহাসড়কের চারলেনেরও উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণের ফলে ময়মনসিংহ বিভাগ ও গাজীপুর জেলা থেকে কৃষি ও শিল্পজাত পণ্য রাজধানীতে দ্রুত সড়ক পথে পরিবহনে সহজ হবে।
No comments:
Post a Comment