মাদারীপুর শিবচরের কাওড়াকান্দি-শিমুলিয়া নৌরুটে আজ সোমবার সকাল থেকেই আবহাওয়া বিরূপ হয়ে উঠায় পদ্মায় নৌযান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে সরকারী ছুটি শুরু হওয়ায় শুক্রবার থেকেই বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। এদিকে গতকাল রবিবার থেকেই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হওয়ায় ঘরমুখো মানুষের যাত্রা বিঘ্নিত হচ্ছে। বাড়ি ফেরায় বাড়তি দুর্ভোগ হিসেবে দেখা দিয়েছে এই বৈরি আবহাওয়া।
বিআইডব্লিউটিসি’র কাওড়াকান্দি ঘাট সূত্রে জানা গেছে, লম্বা ছুটি থাকায় যাত্রীদের তেমন একটা চাপ এবার পড়েনি এই নৌরুটে। গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই যাত্রী আসা শুরু হয়। হাতে সময় একটু বেশি থাকায় যাত্রীরা ধীরে ধীরেই বাড়ি ফিরছে। আজ সোমবার সকাল থেকে আবহাওয়া খারাপ থাকায় যাত্রীরা লঞ্চ, স্পিডবোটের চেয়ে ফেরির দিকে ঝুঁকেছে। গত দুই দিনের চেয়ে ফেরিতে আজ সকাল থেকে যাত্রী ভিড় ছিল অপেক্ষাকৃত বেশি। বর্তমানে এই নৌরুটে ৪টি রোরো ফেরিসহ ১৭টি ফেরিই চলাচল করছে।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানায়, যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে ট্রাক পারাপার বন্ধ রেখেছে। তাছাড়া শিমুলিয়া ঘাট থেকে যাত্রীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার করা হচ্ছে।
কাওড়াকান্দি লঞ্চ ঘাট সূত্রে জানা গেছে, আবহাওয়া খারাপ থাকায় পদ্মা কিছুটা উত্তাল রয়েছে। ফলে অপেক্ষাকৃত বড় লঞ্চগুলোই সকাল থেকে চলাচল করছে। বর্তমানে ৭৭টি লঞ্চ যাত্রীসেবায় নিয়োজিত রয়েছে। আবহাওয়া আরো খারাপ হয়ে উঠলে ছোট লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হবে বলেও জানা গেছে।
এদিকে বৈরি আবহাওয়ার মাঝে স্পিডবোটে করেও পদ্মা পার হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। পদ্মার ঢেউয়ে বেশির ভাগ যাত্রীরাই ভিজে কাওড়াকান্দি ঘাটে এসে নামছেন।
স্পিডবোট ঘাটের একটি সূত্র জানায়, বৈরি আবহাওয়ার কারণে ছোট বোটগুলোর চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বৃষ্টি, বৈরি আবহাওয়া উপেক্ষা করে আজ সকাল থেকেই ঘরে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। প্রিয়জনের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন তারা। তবে কাওড়াকান্দি ঘাটে নেমে বৃষ্টি-কাঁদা ও যানজটে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। লঞ্চ, স্পিডবোট থেকে নেমে পায়ে হাটার রাস্তায় ছোট গাড়িগুলো যাত্রী উঠানোয় মহাসড়কে উঠতে দূরপাল্লার যাত্রীদের কষ্টের সীমা নেই বলে জানান যাত্রীরা। এছাড়া মহাসড়কের কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে ভিআইপি মোড় এবং বেইলী ব্রিজ থেকে পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক পর্যন্ত গাড়ির জটলা লেগে থাকতে দেখা গেছে।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, বৈরি আবহাওয়ার পাশাপাশি যাত্রীরা দুরপাল্লার পরিবহন সংকটে পড়ছে। এ সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা খুলনা, বরিশাল, ভাটিয়াপাড়া, মোকসেদপুর, নরাইল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, টরকিসহ দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় অর্ধশতাধিক রুটে যাত্রীদের কাছ থেকে প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের পরেও দ্বিগুন থেকে তিনগুন পর্যন্ত ভাড়া আদায় করছে পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা। এদিকে অতিরিক্ত ভাড়ার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি বেপরোয়া মাইক্রোবাস চালকরা। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কাওরাকান্দি লঞ্চ ও স্পিডবোট ঘাটের সড়কে যত্রতত্র ভাবে ইজিবাইক, মাহিদ্রা, সবুজবাংলা রেখে গাড়িতে যাত্রী উঠাচ্ছে। ফলে লঞ্চ, স্পিডবোট থেকে যাত্রীরা নেমে মহাসড়কে উঠতে দূর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
খুলনার যাত্রী সোনিয়া আক্তার ও আসাদুজ্জামান জানান, যানজটের কারণে ঘাট থেকে নেমে প্রায় আড়াই কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে যাত্রীদের গন্তব্যের পরিবহনে পৌছাতে হচ্ছে। ফলে বৈরী আবহাওয়ায় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে দূর্ভোগ নেমে এসেছে যাত্রীদের ওপর।
এ ব্যাপারে শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরান আহমেদ বলেন, ‘প্রশাসনের ব্যাপক তদারকির মধ্য দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে কাওড়াকান্দি ঘাট। যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের ব্যাপক তৎপরতা রয়েছে। পুলিশ, র্যাব, আনসার, ফায়ার সার্ভিস, ভ্রাম্যমাণ আদালত একযোগে কাজ করে যাচ্ছে কাওড়াকান্দি ঘাটে।
No comments:
Post a Comment