আতংক মনের ভেতর ভর করছেই। কোথাও যেন এক ধরণের শংকা ! মানুষের ঈদের আনন্দে ভাসতে যাওয়ারও অন্তরায় অজানা এক ভয়- তেমন খবর পাওয়া যাচ্ছে। গুলশান হামলায় সন্ত্রাসীদের জীবনধারার চিত্র প্রকাশিত হওয়ার পর হতেই অভিজাত এলাকা থেকে শুরু করে সব কিছুকেই আর সহজ ভাবে নেয়ার সুযোগ থাকছে না। দেশের নিরন্ন মানুষ হতে শুরু করে নাগরিক প্রতিনিধিদের মধ্যে জানা ভয়-ই কাজ করছে। হয়তো এখানেই ওই বিশেষ চক্রটি সফল, সফল অতি অবশ্যই সেদিনের নাগরিক হত্যা করার অযাচিত মিশনটিও। ২২ জন দেশী ও বিদেশী মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়াকে আর কি বা বলা যায় বলে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মত রাখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, জঙ্গিরা অবশ্যই সফল। কিন্তু যে পথে চলছে বিদেশী নাগরিক হত্যা করার কিলিং মিশন, সারাদেশে ধর্মীয় যাজক কিংবা পুরোহিতদের উপর প্রায় সপ্তাহে সপ্তাহে আক্রমন করার ধারাবাহিক সূচী- রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা পরিবেশ সৃষ্টির জন্য তা যথেষ্ঠ। এদিকে বুধবার ৬ জুলাইকে জীবন নিরাপদের তারিখ হিসাবে বিবেচনার সুযোগ কম বলে মত রাখছেন জননেতা রিসার্চ টিমের প্রধান সমন্বয়ক কামরুল হাসান নাসিম। তিনি বলছেন, “একই দিনে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদ উল ফিতর হতে পারে আবার সনাতনীদের ২৯ জুন শুরু হওয়া রথ যাত্রা সেদিন উল্টোরথ দিয়ে শেষ হবে এই উৎসব। কাজেই এদিনেও হামলা হতে পারে। দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে।”
এদিকে মঙ্গলবার চাঁদ দেখা কমিটির সভায় জানা যাবে ৬ জুলাই ঈদ উল ফিতর অনুষ্ঠিত হবে কিনা! অন্যদিকে বিভিন্ন স্থানেরমতো ঢাকা শহর, ঢাকার পার্শ্ববর্তী ধামরাই এবং সিলেটে বহুকাল ধরে চলে আসছে ঐতিহ্যবাহী রথটানা উৎসব। ঢাকায় শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা, ধামরাইয়ে শ্রী শ্রী যশোমাধবের ও সিলেটের রথযাত্রার উল্টোরথযাত্রা ৬ জুলাই শেষ হবে। আর ঠিক সে কারণেই জঙ্গিদের টার্গেট মসজিদ, ঈদ্গাহ কিংবা উল্টো রথযাত্রার বিভিন্ন পয়েন্ট কে ঘিরে রয়েছে কিনা তা নিয়ে ভাবার সুযোগ থাকছে।
ধারণা করা যেতেই পারে যে, ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে জয়কালী মন্দির, শাপলা চত্বর, দৈনিক বাংলা, বায়তুল মোকাররম, জাতীয় প্রেসক্লাব, দোয়েল চত্বর, রমনা কালীমন্দির, জগন্নাথ হল, পলাশী মোড় এবং ঢাকার স্বামীবাগের ইসকন আশ্রম কে টার্গেটের কেন্দ্রবিন্দু করা হতে পারে। কারণ, সনাতনীদের লাখো লাখো জনতার রথযাত্রায় এই এলাকাসমুহ ছুঁয়ে যাওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আছে। অন্যদিকে পাড়া ও মহল্লার মসজিদও জঙ্গিদের লক্ষ্য হতে পারে বলে শংকা প্রকাশ করা যায়। যে মসজিদের ইমাম কে তাঁরা তাঁদের মতালম্বী বলে মনে করছে না!
অন্যদিকে সনাতন ধর্মের সব বয়সের নারী পুরুষ নেচে গেয়ে রথের রশি ধরে টেনে নিয়ে আসেন। পুরুষেরা শঙ্খ, ঘণ্টা, কাঁসা, ঢাক, ঢোল বাজিয়ে পরিবেশ মুখর করে তোলেন। আর নারীরা উলুধ্বনির মাধ্যমে রথটানায় শামিল হন। এটির কার্যক্রম সাংস্কৃতিক বিরুদ্ধ থেকেই জঙ্গিরা আক্রমণাত্মক হলেও হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও যাদের ব্যবহার করা হচ্ছে তাদেরকে এমন ধর্মীয় চিন্তার বেষ্টনিতে বেঁধে রাখা হলেও মাষ্টার মাইন্ড যে রাজনৈতিক জ্ঞান মনস্ক তা অতি সচেতন শ্রেণি বোঝার মানসে রয়েছেন।
এই প্রসঙ্গেই জননেতা টিমের প্রধান সমন্বয়ক রাজনীতিক, সাংবাদিক, গবেষক, কবি কামরুল হাসান নাসিম বলেছেন রবিবার তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “পৃথিবীর কোথাও ইসলামী বিপ্লব করার অর্থবহ উদ্যোগ নেই, আছে ধর্মীয় আশ্লেষে রাজনৈতিক হত্যা ও লক্ষ্য পূরণের অযাচিত মিশন।”
অপরদিকে রথযাত্রার টানা নয়দিন পর ৬ জুলাই ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে যাত্রা করবে যে উল্টো রথ সেটিকে জঙ্গিদের আক্রমণে ভয়াবহ কিছু না হওয়ার জন্য দেশের গোয়েন্দা সংস্থাকে কাজ করার জন্য জননেতা টিমের এই প্রতিবেদনটি ভুমিকা রাখতে সচেষ্ট হবে বলে মনে করার সুযোগ থাকছে।
এদিকে প্রতি বছর আষাঢ়ের শুক্লা দ্বিতীয়ার্ধে ঢাকার অদুরে ধামরাইয়ে রথযাত্রা উৎসব শুরু হয়। এদিন রথের শীর্ষে দেবতাদের মূর্তি উঠিয়ে রথটানা হয়। লাখো হিন্দু ধর্মবলম্বীরা এদিন ধামরাইয়ে সমবেত হন রথ টানতে। ধামরাই বাজারের এক প্রান্তে মাধব মন্দিরের সামনে থেকে এদিন রথ টেনে এনে রাখা হয় বাজারের অপর প্রান্তে। আর ওই পক্ষের দশমীতে পুনরায় সেই রথ টেনে আগের জায়গায় আনা হয়।
প্রায় সাড়ে তিনশ’ বছর আগে ধামরাইয়ে তৈরি হয়েছিল প্রথম রথ। বিশাল ৭ তলা রথ নির্মাণ করেছিলেন মানিকগঞ্জের বালিয়াটির তৎকালীন জমিদারগণ। প্রাচীন রথের উচ্চতা ছিল ৬০ ফুট। এই রথ ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেয়।
পরে প্রায় ২৫ ফুট উচ্চতার একটি কাঠের তৈরি ক্ষুদ্র রথের যাত্রা অনুষ্ঠিত হত।
এ বছর ভারত সরকারের আর্থিক সহায়তায় প্রায় কোটি টাকা খরচ করে আদি রথের অনুরূপ একটি রথ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রায় ৪০ ফুট উঁচু এবং ২০ ফুট চওড়া কাঠের তৈরি এ রথের চারপাশে খোদাই করা হয়েছে বিভিন্ন দেব দবীর প্রতিকৃতি।
রথযাত্রা উপলক্ষে ধামরাইয়ে মাসব্যাপী গ্রামীণ ও কুটিরশিল্প মেলা অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে বিভিন্ন হস্তশিল্প, মৃৎশিল্প, পোশাক, ব্যাগ, বেত, কাসা ও পিতলের জিনিসপত্র, চুড়ি এবং নানান রকমের খেলনা, মিষ্টিজাতীয় খাবারের সমারোহ ঘটে।
এছাড়া পুতুল নাচ, যাত্রাপালা, সার্কাস ইত্যাদিও থাকে এই মেলায়।
ঢাকার গুলিস্তান থেকে শুভযাত্রা, বিআরটিসি পরিবহন, গাবতলী থেকে যাত্রীসেবা, নবীন বরণ, ভিলেজ লাইন, জনসেবা পরিবহন, বাবু বাজার থেকে শুকতারা পরিবহনে চড়ে যাওয়া যায় ধামরাই। এছাড়াও ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জ ও আরিচাগামী যে কোনো বাসে উঠেই নামতে পারেন ধামরাই বাস স্টেশন। ভাড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে কিংবা রিকশায় ধামরাই বাজার। এবার সেই উল্টো রথের দিনে অর্থাৎ ৬ জুলাই তে জঙ্গিদের টার্গেট ধামরাই বাজার হতে পারে!
সিলেটের রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় ভিন্ন আমেজে। এদিন শহরের বিভিন্ন মন্দির থেকে ভক্তরা রথ টেনে নিয়ে আসেন রিকাবী বাজারে। বেশ কয়েকটি রথ সেখানে জড়ো করে প্রার্থণা করেন ভক্তরা। দিনশেষে রথ নিয়ে আবার ফিরে যান তারা। সিলেটেও এমন টার্গেটে পড়তে পারে উল্টো রথযাত্রার উৎসব।
গুলশানের পর এবার যমুনা ফিউচার পার্কে হামলার ঘোষণা দিয়ে টুইট করেছে আইএসআইএস। ওই টুইট বার্তায় বলা হয়েছে আগামী ২০ জুলাই যমুনা ফিউচার পার্কে হামলা করা হবে।
সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে কামাল আহমেদ নামে একটি পেইজ থেকে এই হুমকি দেয়া হয়। অ্যাকাউন্টটিতে নিজেদের ইসলামিক স্ট্যাটস অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইএসআইএস) দাবি করা হয়। যদিও পোস্টটি ডিলিট করা হয়েছে।
অপরদিকে যে সকল আলেম ওলামাদের ঈদের জামাতে ইমামতি করার সুযোগ সুযোগ থাকবে এবং তাঁদের মধ্যে যাদের প্রতি জঙ্গিদের আস্থা নেই- সেরকম কিছুকে অবলম্বন করেও আক্রমন হতে পারে। যদিও গুলশান হামলার পর অন্তত ৪ জন জঙ্গির পরিণতি দেখে দিগভ্রান্ত তরুণ সন্ত্রাসীরা নতুন করে ভাবতেই পারে কিন্তু তাঁদের মাষ্টার মাইন্ড বা নেপথ্য জঙ্গি নেতা কিভাবে এই অনভিপ্রেত মিশন পরিচালনা করছেন- তা তো বোঝার অবকাশ কম বলেই আবারো শংকা রয়েই যায় ! সাবধান, সামনেই ৬ জুলাই, সতর্ক হোক দেশবাসী ও অতি অবশ্যই আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।
No comments:
Post a Comment