Tuesday, July 5, 2016

চট্টগ্রামের তালিকাভুক্ত ৫৩ জঙ্গিরও বেশিরভাগই ধনাঢ্য, অভিজাত পরিবারের সন্তান ।| রয়েছে ব্যারিস্টার শাকিলার নামও

রাজধানীর গুলশানের আটির্জানে হোটেলে জঙ্গিহামলার ঘটনা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। হামলার ধরন-ধারণ থেকে শুরু করে নৃশংসতার ব্যপকতা সব কিছু নিয়েই নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে সরকার। আর নতুন করে ভাববার কারণ হচ্ছে হামলাকারী সবাই সমাজের বিত্তবানদের সন্তান এবং বেশিরভাগই উচ্চ শিক্ষিত। বেশ কিছুদিন ধরে বিশেষ করে ব্লগার রাজীব খুনের পর থেকেই এই প্রবণতা লক্ষ্য করা গেলেও আমাদের গোয়েন্দা বাহিনীর চোখে বিষয়টি ধরা না পরার খেসারতই হচ্ছে গুলশান হামলা। এদিকে বিশেষ এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে- চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের তালিকাভুক্ত ৫৩ জঙ্গির বেশিরভাগই ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান। এদের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ। বলাবলি হচ্ছে- এদের অনেকেই এখন বিদেশে অবস্থান করছে। এই ৫৩ জঙ্গির তালিকায় বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের সাংবিধানিক পদধারী এক ব্যক্তির সন্তানও রয়েছে। ওই পরিবারের সবাই উচ্চ শিক্ষিতও।




চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র বলছে, জঙ্গি সংগঠন আনসারউল্লাহ বাংলা টিম চট্টগ্রামের নেতৃত্বে আছেন ওই ধনাঢ্য পরিবারের উচ্চশিক্ষিত বিবাহিত যুবক আসিফ আদনান (২৬)। তার বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশে। রাজধানীর শাহবাগ থানার সেগুনবাগিচায়ও তাদের বাসা রয়েছে। পুলিশের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শহীদ হামজা ব্রিগেডের সঙ্গে আছেন, হাটহাজারীর আবুল কাশেম (৬০), আল ফাত্তাহ (৩৫), আজিজ ও ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা এবং বাঁশখালীর মাওলানা মো. মোবারক। এদের মধ্যে আবুল কাশেম মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী এবং হামজা ব্রিগেডের অর্থ জোগানদাতা। মাওলানা মো. মোবারক দুই মাস আগে মালয়েশিয়ায় মারা গেছে বলে একটি তথ্য পুলিশের কাছে থাকলেও মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারছে না পুলিশ। আর ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা উচ্চ আদালতের আইনজীবী। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ সহচর ও বিএনপির সাবেক হুইপ ওয়াহিদুল আলমের কন্যা। পুলিশের তালিকাভুক্ত জেএমবির সদস্যরা হচ্ছেন- হাটহাজারীর মঞ্জুরুল মুরাদ ওরফে আবদুল্লাহ মো. মুরাদ ওরফে আবদুল্লাহ আল রায়হান মুরাদ, হাফেজ আহমেদ কাদের মঈনুদ্দিন ওরফে উদয় (১৯) ও সিরাজুল মোস্তফা প্রকাশ সোলায়মান (১৯) এবং সীতাকুন্ডের আইয়ূব আলী ওরফে আবু জর।


এদের মধ্যে আবু জর জেএমবি নেতা বাংলা ভাইয়ের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে পুলিশের তালিকায় উল্লেখ আছে। হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সঙ্গে আছেন, মিরসরাইয়ের মিনহাজুল ইসলাম সাজিব (২৪), সন্দ্বীপের মনির হোসেন (৬৫) ও মাওলানা আকবর হোসাইন, সাতকানিয়ার একটি মসজিদের ইমাম আব্দুল হান্নান (২৪)। এদের মধ্যে মাওলানা আকবর হোসাইন নারায়ণগঞ্জের একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। নিষিদ্ধ ঘোষিত একটি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে আছেন সন্দ্বীপের মাকসুদুর রহমান রনি। হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে আছেন, মিরসরাইয়ের কামরুল হাসান (২৭), ইফতেখারুল ইসলাম(১৯) ও সালাহউদ্দিন স্বপন (২০), আনোয়ারার লোকমান গণি (২৩), বাঁশখালীর জুনায়েদ (৩৪), মুফতি হারুন বিন ইজাহার ও আমজাদ হোসেন (২৪), লোহাগাড়ার আতিক সাবরাজ হিমেল (২৩),সাতকানিয়ার আহসান আলী রিয়াজ, ইমতিয়াজ হোসেন, তন্ময় সুফিয়ান, নূর মোহাম্মদ, নগরীর আন্দরকিল্লার একটি প্রকাশনা সংস্থার কর্মচারী শাহাদাৎ হোসেন (১৯) ও শিক্ষানবিশ আইনজীবী ফয়সাল রহমান লিমন (২৫), বোয়ালখালীর হাবিবুন্নবী প্রকাশ আশিকুর রহমান, রায়হানুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত এক আনসার কমান্ডারের ছেলে রেজাউল ইসলাম ও এমদাদুল ইসলাম (২৩), রাঙ্গুনিয়ার শরফুল আউয়াল ও ইউএসটিসি থেকে ফার্মেসি অনুষদের মাস্টার্স করা নাজমুল কাদের (২৬), রাউজানের বাসিন্দা কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এস এম জুলহাস নাঈম ও বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শেষবর্ষের ছাত্র মহিবুল আলম, পটিয়ার ফরমান উল্লাহ, সীতাকুন্ডের আব্দুল কাদির, আলাউদ্দিন প্রকাশ রুবেল, জুলফিকার আলী, মিনহাজ উদ্দিন রুবেল (২৩), তানজিব হোসেন, কাজী আহাম্মদ এরফান ইকরাম (২১) ও ডেন্টাল সার্জন মোরশেদুল আলম, ফটিকছড়ির সাফায়েত ইয়াছিন ও তার ভাই সোহান ইয়াছির, ফটিকছড়ির বাসিন্দা ওমানপ্রবাসী সাহেদ হোসাইন সাকের, হাটহাজারীর ইসমাইল হোসেন, মোবারক হোসেন, আতিকুর রহমান (২৬), ইমতিয়াজ সেলিম এবং মোন্তাসির আলম রাজিব (২৫)।



এরমধ্যে হারুন বিন ইজাহারের পরিচয় হিযবুত তাহরীর হিসেবে উল্লেখ থাকলেও তিনি মূলত যুক্ত আছেন হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে। তিনি সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক। হরকাতুল জিহাদের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত হেফাজত নেতা মুফতি ইজাহারুল ইসলাম তার পিতা। সূত্র জানায়, মুফতি ইজহারুল ইসলামের ছেলে হারুন ইজহার বর্তমানে কারাগারে থাকলেও শহীদ হামজা ব্রিগেডের শাকিলা ফারজানা জামিনে বেরিয়ে গেছেন। এছাড়া বাকি ৫১ জন জঙ্গি পুলিশের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই বিদেশে অবস্থান করছেন। সেখান থেকে জঙ্গি তৎপরতায় সক্রিয় রয়েছেন। ফলে জঙ্গিদের গ্রেপ্তার নিয়ে চট্টগ্রাম পুলিশে একরকম অস্থিরতাও বিরাজ করছে। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এ কে এম হাফিজ আক্তার জানান, তালিকাভুক্ত জঙ্গিরা নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতুল মোজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), আনসারউল্লাহ বাংলা টিম, হিযবুত তাহরীর ও হরকাতুল জিহাদ এবং শহীদ হামজা ব্রিগেডের সঙ্গে যুক্ত। এদের মধ্যে যাদের স্থায়ী ঠিকানা চট্টগ্রামে আমরা শুধু তাদের তালিকাভুক্ত করেছি। তালিকাভুক্ত অধিকাংশই উচ্চশিক্ষিত যুবক এবং ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান। তিনি বলেন, তাদের বাড়ি চট্টগ্রামে বলে এমন না যে তারা শুধু চট্টগ্রামেই জঙ্গি কার্যক্রম চালায়।


চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকা, সিলেট, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে স¤পৃক্ত আছে। আমরা তাদের গ্রেপ্তারের সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। যারা জামিনে আছে তাদের নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, জঙ্গি তৎপরতার ঘটনা বিশ্লেষণ করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ চট্টগ্রামে জঙ্গি তৎপরতায় লিপ্ত জঙ্গিদের একটি তালিকা তৈরি করে। এতে আগের তালিকায় ছিল ৩৫ জঙ্গির নাম। সম্প্রতি এ তালিকা আপডেট করে আরও ১৮ জঙ্গির নাম তালিকাভুক্ত করা হয়। এসব জঙ্গিদের অধিকাংশই পলাতক। যাদের গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।



No comments:

Post a Comment