Thursday, July 21, 2016

হামলার আশঙ্কায় ঢাকার শপিংমল-রাস্তায় উপস্থিতি কম, অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা কর্মস্থলে আসেনি, বাসায় বসে 'অলটারনেটিভ ওয়ার্ক মোডালিটি’ প্র্যাকটিস করেছে !

জঙ্গি হামলার আশঙ্কার প্রভাব ছিল বুধবার রাজধারীর ব্যস্ত সড়কগুলোতে। শপিং মলগুলোতে লোকজনের উপস্থিতি ছিল কম। বিদেশীরা কাজ করেন এমন কিছু অফিস আগেভাগেই কর্মীদের ছুটি দিয়ে দেয়।


রাজধানীর একটি শপিং মলে জঙ্গিরা হামলা চালাতে পারে এমন কথা প্রচার হওয়ার পর বেলা বাড়ার সাথে সাথে রাজধানী রাস্তায় গাড়ির পরিমাণ কমতে থাকে। বিকেলের দিকে যান চলাচল কিছুটা বাড়লেও কূটনৈতিক পাড়া গুলশানসহ পুরো শহরে অতিরিক্ত পুলিশী নিরাপত্তা ছিল।


একই অবস্থা শপিং মলগুলোতে। স্বাভাবিকের চেয়ে উপস্থিতি কম। দ্বিগুণ ছিলো নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কর্তৃপক্ষরা জানিয়েছেন, স্বাভাবিকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোর কথা বলেছেন তারা।


নিরাপত্তা তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশও। গুলশান হামলায় পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ায় থানাগুলোতেও অতিরিক্ত সতর্ক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।


সন্ত্রাসী হামলার ব্যাপারে সতর্কবার্তা পাওয়ায় ঢাকায় অবস্থিত জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কর্মীরা গতকাল বুধবার নিজ নিজ কর্মস্থলে যাননি। অনেকে বাসায় বসে অফিসের কাজ সেরেছেন। অনেক প্রতিষ্ঠান আবার বন্ধ ছিল। একই কারণে রাজধানীজুড়ে ছিল সতর্ক অবস্থা। বিভিন্ন স্থানে যানবাহন থামিয়ে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ২০ জুলাই বিভিন্ন স্থানে হামলা হতে পারে,
এ ধরনের একটি গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কয়েক দিন আগে বিভিন্ন সংস্থাকে সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু পরে পুলিশ নিশ্চিত হয় যে এ আশঙ্কার কোনো কারণ নেই। তারপর পুলিশের পক্ষ থেকে বার্তা পাঠিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য সবাইকে বলা হয়েছিল। কিন্তু কিছু সংস্থা তা না শুনে নিজেদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কার্যালয়ে আসতে নিষেধ করে।
হামলার আশঙ্কার ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কাছে এ ধরনের কোনো খবর নেই। কেউ আমার কাছে এসব নিয়ে কোনো তথ্য দেয়নি। আমি মনে করি, রাজধানীর প্রতিটি মানুষ নিরাপদ। কোথাও নিরাপত্তার কোনো সমস্যা নেই। আমাদের পক্ষে যত ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে, আমরা তা-ই করছি।’




নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কের কারণ জানতে চাইলে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোর মাধ্যমে নানা ধরনের গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এ কারণে হয়তো কেউ কেউ আতঙ্কিত হতে পারেন। এসব গুজবে কান না দেওয়ার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতিসংঘের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের একজন বিদেশি কর্মকর্তা গতকাল দুপুরে প্রথম আলোকে জানান, গুলশানে হামলার পর তাঁদের সতর্কভাবে চলাফেরা করতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছিল। এর মধ্যে ১৯ জুলাই রাতে তাঁদের মুঠোফোনে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে একটি বার্তা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, নিরাপত্তাজনিত কারণে ২০ জুলাই কর্মস্থলে আসার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন হলে তাঁরা বাসায় বসেই অফিসের কাজ করতে পারেন।


জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচিতে (ইউএনডিপি) কর্মরত একজন বাংলাদেশি কর্মকর্তা  জানান, কেবল বিদেশি নয়, দেশি কর্মকর্তাদেরও একই ধরনের বার্তা দেওয়া হয়েছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে জরুরি পরিস্থিতিতে বাসায় বসে কাজ করার চল আছে। একে বলা হয় ‘অলটারনেটিভ ওয়ার্ক মোডালিটি’। কর্তৃপক্ষের পরামর্শ শুনে তাঁরা কার্যালয়ে যাননি। তবে আজ থেকে আবার তাঁরা স্বাভাবিক কাজ শুরু করবেন।


বিশ্বব্যাংকের একজন কর্মকর্তাও একই ধরনের বার্তা পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, পাঠানো বার্তায় তাঁদের বলা হয়, ২০ জুলাই অফিসে আসার দরকার নেই। এর বদলে বাসা বা হোটেলকক্ষে বসেই কাজ করা যাবে। এ ছাড়া ওই বার্তায় তাঁদের সতর্ক থাকা এবং চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।


গতকাল আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং জাতিসংঘের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায় প্রধান ফটকে অন্য দিনের চেয়ে বাড়তি নিরাপত্তা। কেয়ার বাংলাদেশ ও সেভ দ্য চিলড্রেন কার্যালয়ে কোনো কর্মকর্তা ছিলেন না। প্রতিটি কার্যালয়ের সামনেই পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সামনে পুলিশের তল্লাশি আয়োজন দেখা গেছে। গুলশান ও ধানমন্ডি এলাকায় গতকাল বাড়তি নিরাপত্তা চোখে পড়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার বাসিন্দারাও। সরেজমিনেও একই চিত্র দেখা গেছে।

No comments:

Post a Comment