মহাভারত আমাদের অযাচিত অনেক কিছু দেয়, আবার প্রাপ্য অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত করে। বেশির ভাগ সময় আমাদেরকে চুনোপুটি ঠাওরে রাঘববোয়াল ভারত না চাইতেই জোর করে বাজে কিছু গছিয়ে দেয় এবং তারও অধিক সুখ-শান্তি কেড়ে নেয়। এই যেমন ধরুন, এই মুহূর্তে আমাদের জলের কোনো দরকার নেই, কিন্তু উনারা ফারাক্কার স্লুইস গেট হাট করে খুলে দিয়েছেন। এখন বানভাসীর ঠেলায় আমাদের অবস্থা বড়ই বেহাল। আবার শুকনো মৌসুমে চাতক পাখির মতো একটু জলের আশায় ওদের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চক্ষু শুকিয়ে গেলেও ওরা আমাদের দেয় সাহারার মরুভূমি। দিনের বেলা গরু না দেওয়ার পণ করে রাতে গরুও দেয় আবার আমাদের গরু ব্যবসায়ীদের চোরাকারবারি ঠাওরে গুলি করেও মারে। আজকাল বন্যহাতির তাণ্ডবের ভাগও আমাদের দেওয়া হচ্ছে। এই লেনাদেনার এখনকার সবচেয়ে বড় আলোচনার ঘটনা রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে ওরা আমাদের ভারী জঞ্জাল উপহার দিচ্ছে। আর বিনিময়ে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ সুন্দরবনটাকেই কেড়ে নিয়ে বাংলাদেশের অক্সিজেনের ভাণ্ডার খালি করে দিতে চাইছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে কবিগুরুর ‘দেবে আর নেবে, মিলিবে মেলাবে’ পুরোদস্তুর ভুল প্রমাণ করে ভারত নেবেটাকেই একমাত্র ব্রত করেছে। আমাদের হাজারো ধ্বংসে ওরা লীলা-উৎসব করে আর গদিটাকে পোক্ত করার আশায় নতজানু আমরা কেবলই নির্বাক বসে থাকি! কিন্তু এবার সেই ভারতীয় মোড়লেরা আমাদের আত্মা ধরে টান দিয়েছে। তার খবর কী আমরা রাখছি? আমরা সাধারণেরা নরম গলায় হলেও জলের প্রতিবাদ, বনের প্রতিবাদ বা সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদ করে যাচ্ছি। বান আর সুন্দরবনের ডামাডোলে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের বাংলাটাই যে কেড়ে নেওয়ার পায়তারা হচ্ছে। তার বেলা আমরা পিনপতন নীরব। ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের ২৯টি রাজ্যের অন্যতম রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ তাদের রাজ্যের নাম বদলে রাখতে চাইছে ‘বাংলা’ বা ‘বঙ্গ’। ইংরেজিতে নাম হবে ‘বেঙ্গল’। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের ‘পশ্চিম’ বাদ, এবার শুধুই বাংলা! আমাদের কারো কোনো কথা চিন্তা না করেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তাঁর রাজ্যের নাম পরিবর্তনের প্রারম্ভিক ক্রিয়া সমাপ্ত করে ফেলেছেন। ওখানকার বিধায়করা যুক্তি দিচ্ছেন, পূর্ববঙ্গ, বা ইস্ট পাকিস্তান যদি সগৌরবে বাংলাদেশ হতে পারে, তা হলে স্বাধীন ভারতের অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গ বাংলা হবে না কেন? অতএব ভবিষ্যতে শুধুই বেঙ্গল হিসেবে পরিচিত হতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ৷ বাংলাতেও রাজ্যের নাম হবে ‘বাংলা’, অথবা ‘বঙ্গ’৷ এই মর্মে একটি সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে পাস হয়ে গেছে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে৷ সিদ্ধান্তটি এরপর রাজ্য বিধানসভার একটি বিশেষ অধিবেশনে অনুমোদিত হবে এবং তারও পরে পরিবর্তিত নামটি যাবে সংসদের অনুমোদনের জন্য৷ পশ্চিমবঙ্গের পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারও একই দাবি তুলেছিল। তবে বিচার বিবেচনা করে সেই সময় কেন্দ্রীয় সরকার তা বাতিল করে দিয়েছিল। এবার আবারও মমতা ব্যানার্জির মাথায় পুরোনো পোকাটা ওড়াওড়ি শুরু করে দিয়েছে। যুক্তি হিসেবে বলা হচ্ছে, রাজ্যের নাম ওয়েস্ট বেঙ্গল বলে কেন্দ্রে যেকোনো আলোচনা বা দাবি দাওয়া পেশের ক্ষেত্রে সবার পরে ডাক আসে ওই রাজ্যের। কারণ ওদের নামের আদ্যাক্ষর ‘ডব্লিউ’! এখন ওই খোড়া যুক্তি অনুযায়ী ত্রিপুরা রাজ্য যদি বলে- আমাদের ‘টি’ খুবই পেছনে তাই আমাদের রাজ্যের নাম আমরা এপুরা, বিপুরা বা নিদেনপক্ষে ডিপুরা রাখতে চাই- তার বেলা কী হবে? বৃহত্তর বঙ্গদেশে সভ্যতার সূচনা ঘটে আজ থেকে ৪ হাজার বছর আগে। এই সময় দ্রাবিড়, তিব্বতি-বর্মি ও অস্ত্রো-এশীয় জাতিগোষ্ঠী এই অঞ্চলে এসে বসতি স্থাপন করেছিল। বঙ্গ বা বাংলা নামের সঠিক উৎসটি অজ্ঞাত এবং এই সম্পর্কে একাধিক মতবাদ প্রচলিত আছে। ধারণা করা হয়, খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ অব্দে এই অঞ্চলে বসবাসকারী দ্রাবিড়-ভাষী বং জাতিগোষ্ঠীর ভাষা বা তাদের নামানুসারে এই অঞ্চলের নামকরণ হয় বঙ্গ। সংস্কৃত সাহিত্যে বঙ্গ নামটি অনেক জায়গাতেই পাওয়া যায়। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চল স্বাধীন ভারতের অঙ্গরাজ্যে পরিণত হলে এই রাজ্যের নামকরণ পশ্চিমবঙ্গ করা হয়েছিল। ইংরেজিতে West Bengal (ওয়েস্ট বেঙ্গল) নামটিই সরকারিভাবে প্রচলিত। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্যের ইংরেজি নামটি পালটে Paschimbanga রাখার প্রস্তাব দেয়। আইন অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় সেখানকার শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার, অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, নাট্য নির্দেশক বিভাস চক্রবর্তী, কবি শঙ্খ ঘোষসহ বর্ষীয়ান শিল্পী, সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীরা -একে স্বাগত জানিয়েছেন। বাংলার সাথে তাঁদের নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে খোদাই হয়ে যাবে, তাঁরা নাম বদলে প্রীত নাইবা হবেন কেন? কিন্তু এই বেলা আমাদের বুদ্ধিজীবীদের প্রতিক্রিয়া কী, তা জানা যাচ্ছে না। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে নাম বদলের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য প্রাদেশিক বিধানসভার বিশেষ সেশনে উপস্থাপিত হবে। তারপর এই প্রস্তাব যাবে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য দিল্লিতে ভারত সরকারের কাছে। ভবিষ্যৎই বলে দেবে এই নাম বদলে পশ্চিমবঙ্গ ভুল করল না সঠিক কাজটি করল। |
Be SPONSORED Now ।| Be SPONSORED By | |
---|---|
০৫ আগস্ট, ২০১৬ নামাজের সময়সূচি | |
ফজর | ভোর ৩:৪৪ মিনিট |
জোহর | বেলা ১১:৫৯ মিনিট |
আসর | বিকেল ৪:৩৬ মিনিট |
মাগরিব | সন্ধ্যা ৬:৪৭ মিনিট |
ইশা | রাত ৮:১০ মিনিট |
আগামীকালের সূর্যোদয় ভোর ৫:১১ মিনিট | আজ সূর্যাস্ত সন্ধ্যা ৬:৪৭ মিনিট |
No comments:
Post a Comment