গুলশান হামলার নেপথ্যে থাকা পরিকল্পনাকারী, মদদদাতা ও অর্থের জোগানদাতাদের অনেককে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। বলা হচ্ছে, তারা দুটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত। ইতিমধ্যে এদের কানেকশনের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণও এসেছে। শিগগির এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জনসাধারণকে বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে। এর আগে চিহ্নিত ব্যক্তিরা গ্রেফতার হতে পারেন।
পুলিশের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে এমন তথ্য নিশ্চিত করেন। এছাড়া এ তথ্যের সত্যতা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল একই ইঙ্গিত দেন। মুঠোফোনে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, হামলার নেপথ্যে যে দুটি রাজনৈতিক দলের যেসব নেতা জড়িত তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে। হামলার ঘটনায় কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশন্যাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, গুলশান হামলার নেপথ্যে যারা জড়িত তাদের অল্প সময়ের মধ্যেই আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা এ হামলার নেপথ্যে রয়েছে। এদের অনেককে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। তাদের বিষয়ে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত এখন যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
গুলশান হামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কয়েকজন যুগান্তরকে বলেন, তারা এ ঘটনায় প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণ দেখে রীতিমতো হতবাক হয়েছেন। এর পেছনে রাজনৈতিক দলের নেতারা জড়িত থাকতে পারেন এমন ধারণা নিয়ে তারা তদন্ত শুরু করেননি। কিন্তু যত সময় যাচ্ছে ততই তারা বিস্মিত হচ্ছেন। তবে তদন্তের স্বার্থে এখন তারা এ বিষয়ে কোনো কিছুই বলবেন না। শুধু এটুকু বলতে পারেন, গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার ঘটনায় একেবারে নেপথ্যের নাটাই ছিল রাজনৈতিক নেতাদের হাতে। যারা সন্তর্পণে খুব দূর থেকে কলকাঠি নেড়েছেন। এদের সঙ্গে এই সমাজের আরও বেশ কিছু লিংক রয়েছে। যাদের সঙ্গে রয়েছে দেশী ও বিদেশী কয়েকটি শক্তিশালী চক্র। এরাই মূলত একযোগে এ দুটি হামলায় নেপথ্যে কাজ করেছে। তাদের হাতে আরও হামলার ছক ছিল। কিন্তু যাদের দিয়ে পরবর্তী হামলাগুলো করানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের অনেকে এখন গোয়েন্দা জালে ধরা পড়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীও এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, তদন্তে যা পাওয়া যাচ্ছে তা শুনে তাজ্জব বনে যেতে হয়। বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জড়িতদের খুঁজে বের করা কঠিন হবে না। এটি শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র। সবাইকে ধরে আমরা অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে পারব।
এদিকে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কয়েকজন যুগান্তরকে জানান, গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার পর আটককৃত বিভিন্ন স্তরের জঙ্গিদের কাছ থেকে পাওয়া যায় পরিকল্পনাকারী, মদদদাতা ও অর্থের জোগানদাতাদের নামধাম। এদের কেউ কেউ দেশেই আছেন। এরা দেশে ও বিদেশে একাধিক বৈঠক করে গুলশানে বিদেশী হত্যার নিষ্ঠুর পরিকল্পনা করে। এ হামলায় নেপথ্যে যারা কাজ করেছেন তাদের অন্তত একজনের বিষয়ে অকাট্য প্রমাণ রয়েছে। সূত্রটি জানায়, হামলার নেপথ্যে বিদেশী লিংকগুলো কিভাবে যুক্ত হয়ে ভূমিকা রেখেছে আইনশৃংখলা বাহিনী সে বিষয়গুলোও এখন খতিয়ে দেখছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, এ হামলার পেছনে ধাপে ধাপে কয়েকটি স্তর কাজ করেছে। ক্ষেত্রবিশেষে এমনও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, এক স্তর অপর স্তরকে চেনে না। তাই কোন কোন স্তরে কে কিভাবে ভূমিকা রেখেছে সেগুলো আরও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রথম স্তরে যেসব রাজনৈতিক কানেকশন সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে তাদের গতিবিধি গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের মধ্যে আনা হয়েছে। একজন কর্মকর্তার কাছে জানতে চাওয়া হয় রাজনৈতিক ব্যক্তিরা কেন এ ধরনের জঘন্যতম অপরাধে নিজেদের জড়াবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ হামলার পেছনেই রয়েছে ‘রাজনীতি’। তাই সংশ্লিষ্টরা মূলত সরকার পতনের টার্গেট নিয়ে এ ধরনের হামলার ব্লুপ্রিন্ট করে। আর ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয় কাটআউট পদ্ধতিতে প্রস্তুত করা এসব দেশীয় জঙ্গি সন্ত্রাসীদের। এজন্য অনেক আগে থেকে অঢেল অর্থ ব্যয় করা হয়। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর নীলনকশার অংশ হিসেবে তৃতীয় পক্ষ এ হামলায় যুক্ত হয়েছে। তিনি জানান, দেশে যেসব নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন গড়ে উঠেছে এর পেছনেও রয়েছে জামায়াত। দলটি তাদের সন্ত্রাসী ফোর্স হিসেবে বিভিন্ন নামে দূর থেকে এসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তৈরি করে। যে কারণে গুলশান হামলায় এই প্রথম তারা তিনটি জঙ্গি সংগঠনকে একীভূত করে হামলা চালায়। এরা হল জেএমবি, এবিটি ও হিজবুত তাহরির।
গোয়েন্দা সূত্রে আরও জানা গেছে, গুলশান হামলার ঘটনায় গোয়েন্দাদের কাছে নতুন আরও কিছু তথ্য আসছে, যা অনেকটা পিলে চমকানো তথ্য বলে দাবি করা হচ্ছে। তারা বলছেন, কথিত খেলাফতের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলে মগজ ধোলাই করা জঙ্গিদের হামলায় নিয়োগ করা হয়। এই নিয়োগের পেছনেও কাজ করেছে ক্ষমতার রাজনীতি ও দুটি রাজনৈতিক দলের কিছু বিপথগামী সদস্য। জামায়াত ছাড়া অপর রাজনৈতিক দলটি জামায়াতের আশ্রয় ও প্রশ্রয়দাতা হিসেবে পরিচিত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, হামলার পর আটক জঙ্গি সদস্য, প্রশিক্ষক, নিচের সারির পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশকদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য পাওয়া যায়। তারা স্বীকার করেছে, প্রতিটি ধাপেই বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করা হয়। আর তাদের ওপরে রয়েছে মূল পরিকল্পনাকারী ও রাজনৈতিক কানেকশন।
এদিকে গুলশান হামলার পর আটক নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসানাত রেজা করিমের কাছ থেকে এ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এ শিক্ষককের তথ্যেও বিভিন্ন ধাপে হামলার ছক জানা যায়। হাসানাতের সঙ্গে বিভিন্ন জনের কানেকশন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর মধ্যে সরকারের একটি সংস্থা তার তথ্যের ভিত্তিতে গুলশান হামলার নেপথ্যের ‘মাস্টারমাইন্ড’দের শনাক্ত করে। এদেরই বলা হচ্ছে ‘মদদদাতা’। হাসানাতের তথ্যে আরও জানা গেছে, গুলশান হামলার আগে থেকেই টিভি পর্দায় সুবিধাভোগী গোষ্ঠী চোখ রাখে। তারা অপেক্ষা করছিলেন, কখন ঘটনাটি মিডিয়ায় আসবে। এ গোষ্ঠীর একটি সূত্রের সঙ্গে হাসানাতের লিংক ছিল। ঘটনা ঘটার পরপরই হাসানাত সেই সূত্রকে বিশেষ অ্যাপসের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়। এই হাসানাতের সঙ্গে কারাবন্দি কয়েকজন শিক্ষকেরও সম্পর্ক পাওয়া যায়। যারা বহু আগ থেকে জঙ্গিবাদের হোতা হিসেবে কালো তালিকাভুক্ত।
eFAIR24bd/ Dynamic >>>>>>>>>>>>> eFAIR24bd/ Transparent >>>>>>>>>>>>>>>> eFAIR24bd/ Spice>>>>>>>> @SHOPpers DeSERVE
Friday, July 22, 2016
গুলশান ট্রাজেডি ।| হামলার নেপথ্যে ছিল দুই রাজনৈতিক দল
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment