বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে বেশ কিছুদিন চাকরি করেছেন। কিন্তু মন বসেনি। নিজে কিছু একটা করার তাগিদ তাড়িয়ে বেড়িয়েছে সব সময়। একসময় সাহস করে চাকরি ছাড়লেন। স্বপ্ন দেখলেন উদ্যোক্তা হওয়ার। পা বাড়ালেন পদে পদে লোকসান আর অনিশ্চয়তার পথে। হাত দিলেন কাঁকড়া চাষে। আর সেই কাঁকড়াই এখন অং ছিনের রূপকথার ‘স্বর্ণের রাজহাঁসের ডিম’। রূপকথাকে বাস্তবে রূপ দেওয়া সেই মানুষটির নাম অং ছিন। তাঁর বাড়ি কক্সবাজার শহরের এন্ডারসন সড়কে। অং ছিনের চৌফলদণ্ডী ও হ্নীলার খামারের নরম খোলসের কাঁকড়া রপ্তানি হচ্ছে ছয় দেশ—থাইল্যান্ড, হংকং, জাপান, কোরিয়া, তাইওয়ান ও মালয়েশিয়ায়। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশে কাঁকড়া রপ্তানির প্রক্রিয়া চলছে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে অং ছিনের এই কাঁকড়া। আর কাঁকড়া রপ্তানির করে প্রতিবছর অং ছিনের আয় এখন ২০ থেকে ২৫ লাখ। কক্সবাজারে তথা দেশেই নরম খোলসের কাঁকড়ার বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরুই হয় এই অং ছিনের হাত ধরেই। মধ্যবয়সী অং ছিনের পথ ধরে ইতিমধ্যে কক্সবাজারের অনেকে বাণিজ্যিকভাবে কাঁকড়া উৎপাদনে নেমে পড়েছেন। লাভবান হচ্ছেন কমবেশি সবাই। অনেকে চিংড়ি চাষ ফেলে কাঁকড়া চাষে মনোযোগী হচ্ছেন। ইতিমধ্যে অং ছিন পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। ২০ জুলাই রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এলাকার মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনায় সাফল্যের জন্য তাঁকে ‘জাতীয় মৎস্য পুরস্কার-২০১৬’ প্রদান করা হয়। পুরস্কার হিসেবে তাঁর হাতে স্বর্ণপদক ও ৫০ হাজার টাকার চেক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৯৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সামুদ্রিক বিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেন অং ছিন। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে অং ছিন বিভিন্ন সময় চিংড়ি উৎপাদনের হ্যাচারি ও চিংড়ি প্রকল্পে বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করেন। ফলে চিংড়ির পাশাপাশি কাঁকড়া চাষের সব কৌশল রপ্ত ছিল তাঁর। গত মঙ্গলবার সকালে চৌফলদণ্ডীর খামারে গেলে শোনান তাঁর সফল উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প। অং ছিন জানান, ২০১১ সালে নরম খোলসের কাঁকড়া উৎপাদনের জন্য বাড়ি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে খুরুশকূল ইউনিয়নের মনুপাড়ায় তিন একর জমি ইজারা নেন। এরপর দেড় একরের দুটি পুকুর খনন করে তাতে লবণাক্ত পানি ঢুকিয়ে কাঁকড়ার বাণিজ্যিক চাষ শুরু করেন। ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে শুরু হয় কাঁকড়ার উৎপাদন। ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরে কাঁকড়া উৎপাদিত হয়েছে প্রায় ১১ মেট্রিক টন। মৎস্য বিভাগের সহায়তায় উৎপাদিত ওই কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানি করে পান ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। সব খরচ বাদ দিয়ে এ ক্ষেত্রে অং ছিনের লাভ থাকে প্রায় ১০ লাখ টাকা। ২০১৩ সালে এই প্রকল্পে উৎপাদিত হয় প্রায় ২০ মেট্রিক টন কাঁকড়া। এই কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানি করে তিনি অর্জন করেন প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। এতে তাঁর লাভ থাকে ১৫ লাখ টাকা। কাঁকড়ার উৎপাদন বাড়াতে অং ছিন ২০১৩ সালে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়ার নাফনদীর তীরে গড়ে তোলেন তিন একরের আরেকটি কাঁকড়া প্রকল্প। এখানেও খনন করা হয় দুটি পুকুর। ওই বছরের (২০১৩ সালের) জুলাই মাসে এই প্রকল্পে কাঁকড়ার উৎপাদন শুরু হয়। ২০১৪ সালে দুটি প্রকল্পে (খুরুশকূল ও চৌধুরীপাড়ায়) উৎপাদিত প্রায় ৩০ মেট্রিক টন কাঁকড়া রপ্তানি করে অর্জন করেন ৩ লাখ মার্কিন ডলার। এর বিপরীতে অং ছিনের লাভ থাকে প্রায় ২০ লাখ টাকা। কিন্তু ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে খুরুশকূলের কাঁকড়া প্রকল্পের জমি সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করলে অং ছিন বিপাকে পড়েন। এরপর তিনি সেই কাঁকড়া প্রকল্পটি স্থানান্তর করেন পার্শ্ববর্তী চৌফলদণ্ডী ইউনিয়নের খামারপাড়া এলাকায়। সেখানে তিন একর জমিতে দুটি পুকুর তৈরি করে কাঁকড়া প্রকল্পটি স্থাপন করা হয়। কয়েক মাসের মাথায় সেখানে শুরু হয় কাঁকড়ার উৎপাদন। ২০১৫ সালে এই দুটি প্রকল্পে উৎপাদিত হয়েছে প্রায় ৪০ মেট্রিক টন কাঁকড়া। এই কাঁকড়া রপ্তানি করে অর্জিত হয় প্রায় ৪ লাখ মার্কিন ডলার। অং ছিনের লাভ থাকে প্রায় ২৫ লাখ টাকা। গত মঙ্গলবার সকালে অং ছিনের চৌফলদণ্ডীর ‘ইরাওয়ান কাঁকড়া প্রকল্প’ ঘুরে দেখা গেছে, ১০-১৫ জন লোক বিশাল খামারে কাঁকড়ার রক্ষণাবেক্ষণ করছেন। খামারের পুকুরে ওপরে টিনের ছাউনিযুক্ত লম্বা একটি কাঠের সেতু। সেখানে দাঁড়িয়ে লোকজন দেখভাল করছেন কাঁকড়া। কেউ কাঁকড়ার খাদ্য হিসেবে ছিটাচ্ছেন কাঁচা মাছ। কেউ কাঁকড়া ধরে খাঁচায় রাখছেন। কেউ আবার পলিথিন মুড়িয়ে সেই কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানির জন্য প্যাকেটজাত (হিমায়িত) করছেন। কাঁকড়া চাষের জন্য পানিতে স্থাপন করা হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার প্লাস্টিকের বাক্স। প্রতিটি বাক্সে রাখা আছে একাধিক কাঁকড়া। শ্রমিকেরা জানান, মহেশখালী, বদরখালী, চকরিয়া ও টেকনাফ উপকূল থেকে ছোট কাঁকড়া সংগ্রহ করা হয়। প্রতি কেজি ছোট কাঁকড়া বিক্রি হয় ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। এই কাঁকড়া খামারে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। এরপর কাঁকড়ার ওজন ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম হলে বিক্রির জন্য তোলা হয়। তখন প্রতি কেজিতে ধরে ৭ থেকে ১২টি কাঁকড়া। নরম খোলসের এই কাঁকড়া স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয় না। এই কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানি হয়। বর্তমানে দুটি খামারে কর্মসংস্থান হয়েছে ৪০ জন নিয়মিতসহ অন্তত ৯০ জন লোকের। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অমিতোষ সেন বলেন, বাণিজ্যিক কাঁকড়া চাষের প্রথম উদ্যোক্তা অং ছিন এখন বাংলাদেশের মডেল। তাঁর পথ ধরে অনেকে বিদেশে কাঁকড়া ও কুচিয়া রপ্তানি করছেন। ২০১৫ সালে কাঁকড়া ও কুচিয়া রপ্তানির বিপরীতে বাংলাদেশ অর্জন করে ১৯৯ দশমিক ৩৮ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা। |
Be SPONSORED Now ।| Be SPONSORED By | |
---|---|
৩১ জুলাই, ২০১৬ নামাজের সময়সূচি | |
ফজর | ভোর ৩:৪৪ মিনিট |
জোহর | বেলা ১১:৫৯ মিনিট |
আসর | বিকেল ৪:৩৬ মিনিট |
মাগরিব | সন্ধ্যা ৬:৪৭ মিনিট |
ইশা | রাত ৮:১০ মিনিট |
আগামীকালের সূর্যোদয় ভোর ৫:১১ মিনিট | আজ সূর্যাস্ত সন্ধ্যা ৬:৪৭ মিনিট |
No comments:
Post a Comment