Wednesday, July 20, 2016

আশরাফের বক্তব্যে গুঞ্জন, চলছে আলোচনা ও বিশ্লেষণ

পঁচাত্তরের মতো মর্মান্তিক পুনরাবৃত্তি যেন আর না ঘটে এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেছিলেন, বাঙালি কেবল বীরের নয়, বেঈমানের জাতিও। খোলামেলা কিছু না বলতে চাইলেও কিছু একটা ঘটার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি।


গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের আলোচনা সভায় আশরাফ এই বক্তব্য নিয়ে আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে চলছে তুমুল আলোচনা ও বিশ্লেষণ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যখন এমন গুজব ছড়াচ্ছে তখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার কারণও খতিয়ে দেখছেন অনেকেই। যদিও গণমাধ্যমে সৈয়দ আশরাফের বক্তব্য খুব একটা প্রচার হয় না। তবে তিনি যখন গুরুত্বপূর্ণ কোনও বিষয়ে কথা বলেন, তখন দলের নেতাকর্মী, বিরোধী দল, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক এমনকি সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনার তৈরি হয়। সৈয়দ আশরাফ কেন এসব কথা বললেন? কীসের ইঙ্গিত দিলেন? অশুভ কিছু কি ঘটতে যাচ্ছে? সরকার কি কিছু জেনেছে? তার পুরোটা কি জানাতে চাইছে না? না চাইলে কেন? আর পুরোটা জানাতে না চাইলে কেন এভাবে ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বললেন?-বোঝার চেষ্টা করছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী আর শুভানুধ্যায়ীরা।


গুলশানের হলি আর্টিজান আর কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় পুলিশের ওপর জঙ্গি হামলার ভয়াবহতা নাড়া দিয়েছে গোটা দেশবাসীকে। বলা হচ্ছে বাংলাদেশের জঙ্গিদেরও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। এ দেশ থেকে বেশ কিছু মানুষ জঙ্গি অধ্যুষিত এলাকায় ‘জিহাদ’ করতে পাড়ি জমিয়েছেন-এমন নিশ্চিত তথ্যও জানা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জঙ্গিদের হুমকি সম্বলিত বার্তার অভাব নেই। আর এসব বার্তা ছড়ায় সহজে। স্বভাবতই আতঙ্ক ছড়ায় মানুষের মধ্যে। ভিডিও বার্তায় এরই মধ্যে হুমকি দেয়া হয়েছে হলি আর্টিজানের মত হামলা হতেই থাকবে বরং এর সেগুলো হবে আরও ভয়াবহ। এসব হুমকির পর নিরাপত্তা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কূটনীতিকপাড়ার নিরাপত্তায় সাধারণের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করা হয়েছে। মন্ত্রিপাড়াতেও ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ার আগে। সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদেরকে এসএমএস করে সতর্ক করেছে খোদ পুলিশ।


এর সত্যতা স্বীকার করে বিবিসিকে বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ‘জঙ্গি হামলা থেকে কেবলমাত্র নিরাপত্তা বাহিনী কাউকে রক্ষা করতে পারবে না। বরং জনগণকে নিয়েই জঙ্গি হামলা প্রতিরোধ করতে হবে’। আরও বেশ কয়েকজন মন্ত্রী দেশের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন, সতর্ক করেছেন দেশবাসীকে। কিন্তু তাদের কেউ জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুলের মত এভাবে কথা বলেননি। গণমাধ্যমে সৈয়দ আশরাফের তিনটি কথাই মূলত গুরুত্ব পেয়েছে।


আশরাফ তার বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘পঁচাত্তরে আমরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারিয়েছি। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন আর না ঘটে। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করার দায়িত্ব আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের নিতে হবে। আমাদের সবসময় সজাগ ও প্রস্তুত থাকতে হবে। যখন গাছের পাতা নড়ে না, তখনই কিন্তু ঝড় আসে। সুতরাং আপনাদের সবসময়ই সর্তক থাকতে হবে। এই বিষয়ে আমি খোলামেলা কিছু বলতে চাই না, ইশারাই যথেষ্ট। এবং স্বাধীনতার পরপর স্বাধীনতার স্থপতিকে পরিবার-পরিজনসহ হত্যা করার ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে নেই। বাঙালি যেমন বীরের জাতি, তেমনি বেঈমানের জাতি। তাই আমাদের সজাগ থাকার প্রয়োজন আছে। মনে মনে প্রস্তুতি রাখারও প্রয়োজন আছে।’


এরই পরিপ্রেক্ষিতে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘দেশের পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিদিনই নানা গুজব-গুঞ্জন ছড়াচ্ছে। এই অবস্থায় আশরাফ সাহেব কীসের ইঙ্গিত দিলেন সেটা তো খোলাসা করা উচিত ছিল। দেশে কি নিরাপত্তা নিয়ে বড় কোনও ধরনের হুমকি আছে? গোয়েন্দারা কি কিছু জানতে পেরেছে? কিছু জানা গেলে জনগণকে আগেভাগে জানিয়ে দিলে তারা সতর্ক থাকতে পারবে। নইলে এ নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা ও গুঞ্জন ছড়াবে। ভুল বোঝাবুঝিও হতে পারে দলের ভেতর’। বিশেষ করে বাঙালি বেঈমানের জাতি’ এই বাক্যটি আমাকে ভাবাচ্ছে। তিনি কাদের প্রতি ইঙ্গিত করলেন জানা দরকার’।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) ও আওয়ামী লীগপন্থি নীল দলের শিক্ষক নেতা অধ্যাপক আখতারুজ্জামানও লেনিনের সঙ্গে একমত। তিনি বলেন, ‘আশরাফ সাহেবের পুরো বক্তব্যই আমি শুনেছি। বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে তার এই কথাই খুবই গুরুত্ববহ। আমার কাছে মনে হয়েছে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তার বিষয়ে কথা বলেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আওয়ামী লীগ বিরোধী শক্তির হামলার লক্ষ্য একজনই। তিনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শত্রুরা এখনও তাকে সরিয়ে দিতে চায়। তাকে হারাতে পারলে আমরা সবাই হেরে যাবো। পুরো জাতির আর কাউকে কিছু করতে হবে না। আশরাফ সাহেব হয়ত এটাই বোঝাতে চেয়েছেন’।


জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য বলেন, ‘সৈয়দ আশরাফের বক্তব্য নিয়ে অনেক ভেবেছি। কিন্তু দলের সাধারণ সম্পাদকের কথা নিয়ে মন্তব্য করা আমাকে মানায় না’।


দলের আরেক নেতা নূহ উল আলম লেলিন বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে ২১ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। এখনও হয়ত কোনও চক্রান্ত চলছে। রাজনৈতিক অবস্থান থেকে হয়ত এ কথাই বোঝাতে চেয়েছেন সৈয়দ আশরাফ। তিনি হয়ত বোঝাতে চাইছেন আমরা বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি, যেন শেখ হাসিনাকে হারাতে না হয়’।

No comments:

Post a Comment