দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রামে আমদানি-রফতানির সরঞ্জামাদির (ইক্যুপমেন্ট)স্বল্পতায় প্রয়োজনীয় সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ফলে বন্দরে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশি কন্টেইনার জমা পড়েছে। বন্দর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গত ২৩ জুন পোর্ট ইউজার্স ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অপারেশনাল কার্যক্রমে গতি না বাড়ালে বন্দরে আরো ভয়াবহ কন্টেইনার জটের সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করা হয়। এছাড়া ওই বৈঠকে পোশাক প্রস্তুতকারীও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ বিরাজমান সমস্যা সমাধানে প্রস্তাবনা দেয়। একই সঙ্গে বন্দরের ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি ও ইয়ার্ডভিত্তিক পর্যাপ্ত সরঞ্জাম স্থাপন করা না হলে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয় বলে জানান তারা।
বিজিএমইএ জানায়, দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বর্ণদ্বার চট্টগ্রাম বন্দর। এ বন্দর দিয়ে দেশের মোট বাণিজ্যের প্রায় ৯২ শতাংশ পরিবাহিত হয়।
এদিকে, বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বন্দর কর্তৃপক্ষ ২০১৫ সালে ২০ লক্ষ ২৪ হাজার ২০৭ টিইইউস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করেছে। যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি।
জানা যায়, গত মে থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের বহিঃনোঙরে কন্টেইনার বোঝাই জাহাজগুলোকে দীর্ঘদিন অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। জেটিতে জাহাজের কন্টেইনার ডিসচার্জিংসহ লোড ও আনলোডে বিভিন্ন সমস্যা থাকায় সময় ক্ষেপণ হচ্ছে। যথা সময়ে পণ্য খালাস করতে না পারায় জেটিতে কন্টেইনার জট দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে জেটিতে কন্টেইনার ও বহিঃনোঙরে জাহাজ জটের সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থানকাল বেড়েছে ৫ থেকে ৭ দিন।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক কাজী মাহমুদ ঈমাম বিলু বলেন, বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমের বর্তমান যে অবস্থা তাতে ভিশন ২০২১ থেকে অনেক পিছিয়ে আছি। ২০২১ সালের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রাইভেট আইসিটিগুলোর অপারেশনাল সক্ষমতা বাড়ানো ও দক্ষ শ্রমিক দিয়ে ডেলিভারি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। সূত্র জানায়, বন্দরে বর্তমানে ২০ লাখের বেশি টিইইউস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করছে। তবে এ পরিমাণ কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য যে ধরনের সরঞ্জাম প্রয়োজন তা নেই।
বন্দর ঘুরে দেখা গেছে, অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনায় ২৬টি কি-গ্যান্ট্রি ক্রেনের প্রয়োজন থাকলেও রয়েছে মাত্র চারটি। রাবার টায়ার্ড গ্যান্ট্রি ক্রেনের ৫২টির স্থলে রয়েছে মাত্র ২১টি। স্টেডল কেরিয়ার ৩৯টির স্থলে রয়েছে ৩৬টি। অ্যাম্পটি হ্যান্ডলার ৩৯টির মধ্যে রয়েছে মাত্র ১৯টি। ট্রাক্টর ট্রেইলর ১৩০টির স্থলে রয়েছে মাত্র ৪৩টি। এছাড়া কন্টেইনার উঠা-নামানোর জন্য যেখানে ২৯৯টি যন্ত্রপাতি প্রয়োজন, সেখানে রয়েছে মাত্র ৮৭টি। কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের ৮৯৫টি প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির মধ্যে রয়েছে মাত্র ২৮৫টি।
শিপিং এজেন্ট, বার্থ অপারেটর ও বিকডা সূত্রে জানা যায়, বন্দরে হ্যান্ডলিং কার্যক্রম যেভাবে বেড়েছে সে অনুযায়ী অবকাঠামোগত সুবিধা ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বাড়েনি। এছাড়া হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতিগুলো অনেক পুরনো ও জরাজীর্ণ হওয়ায় ঘন ঘন বিকল হচ্ছে। বিশেষ করে স্ট্র্যাডল ক্যারিয়ার ও আরটিজির অবস্থা খুবই খারাপ।
এনসিটি ইয়ার্ডে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের জন্য ২২টি রাবার টায়ার্ড গ্যান্ট্রি ক্রেনের স্থলে রয়েছে মাত্র ১০টি। তাও অধিকাংশই থাকে বিকল। সিসিটি ইয়ার্ডে ১১টি গ্যান্ট্রি ক্রেনগুলো প্রায় সময় বিকল থাকে। বর্তমানে জেনারেল কার্গো বার্থে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির ৪০ ভাগ দিয়ে কার্যক্রম চলছে। অকেজো যন্ত্রপাতি মেরামতের জন্য ওয়ার্কশপও বহুদিন ধরে পড়ে আছে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনা বাড়লেও যন্ত্রপাতি স্বল্পতায় বন্দরে হ্যান্ডলিং কার্যক্রমে উৎপাদনশীলতা ক্রমেই কমছে।
বন্দরের এ অবস্থায় বিজিএমইএ বলছে, এনসিটি, সিসিটি ও জেনারেল কার্গো বার্থে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের জন্য আপদকালীন ব্যবস্থা হিসাবে ভাড়ার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংস্থাপন করা যেতে পারে।
বিজিএমইএ-এর সাবেক সহ সভাপতি নাছির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, পোশাক শিল্পের উন্নয়নসহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বন্দরের অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
তবে চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলম জাগো নিউজকে বলেন, জাহাজ এবং কন্টেইনার জটের জন্য পোশাক শিল্প মালিকরাই দায়ী। কন্টেইনার জট কমাতে আরো দুটি নতুন কন্টেইনার ইয়ার্ড নির্মাণ হচ্ছে। এছাড়া জাহাজের জট কমাতে রাত্রিকালীন জাহাজ চলাচল চালু হয়েছে, যা আগে ছিল না।
No comments:
Post a Comment