সিঙ্গাপুর বন্দর থেকে কনটেইনারবাহী জাহাজ চট্টগ্রামে আসতে সময় লাগে পাঁচ দিন। একই জাহাজ বন্দর জলসীমায় আসার পর থেকে পণ্য খালাস শেষে চট্টগ্রাম ছাড়তে সময় লাগছে সর্বোচ্চ ১৪ দিন। ঈদের ছুটি শেষে ১৮ দিন পরও বন্দরের চিত্র এমনই।
বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান, প্রতিবার ঈদের ছুটিতে কনটেইনারজট হয়। এবার এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জাহাজজটও। পণ্য আমদানি বাড়ায় বন্দরে জাহাজ আগমনের সংখ্যা বেড়েছে। তবে জাহাজ ভেড়ানোর জেটি বাড়েনি। ফলে ঈদের ছুটির পরও জট পুরোপুরি কাটেনি।
জাহাজের জটের কারণে প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের কাঁচামালসহ জরুরি পণ্য হাতে পেতে আগের চেয়ে সময় লাগছে বেশি। নির্ধারিত সময়ে কাঁচামাল থেকে পণ্য তৈরি করে রপ্তানি করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে রপ্তানিকারকদের। জাহাজ বেশি সময় অবস্থান করায় পরিচালনাব্যয়ও বাড়ছে জাহাজ কোম্পানিগুলোর।
কনটেইনার জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা সি কনসোর্টিয়াম বাংলাদেশ লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক ক্যাপ্টেন আহমেদ সাহেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী ফিডার জাহাজগুলো সিঙ্গাপুরে এক দিনেই কনটেইনার খালাস-বোঝাই করা হয়। জাহাজের গতি অনুযায়ী চট্টগ্রাম আসতে সময় লাগে চার থেকে পাঁচ দিন। এসব জাহাজ বন্দরে অবস্থানের সময় বেশি হলে জাহাজের পরিচালনাব্যয় বেড়ে যায়। এর প্রভাব পড়ে পণ্য পরিবহন ভাড়ায়।
বন্দরের তথ্যে দেখা যায়, পণ্য খালাস ও বোঝাই করতে সবকটি জেটিতে সময় লাগছে বড় জোর তিন দিন। অথচ জেটিতে ভেড়ার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে দুই থেকে সর্বোচ্চ ১১ দিন। অর্থাৎ পর্যাপ্ত জেটি থাকলে তিন দিনেই জাহাজ পণ্য খালাস ও বোঝাই করে চট্টগ্রাম ছাড়া সম্ভব।
বন্দর পর্ষদ সদস্য জাফর আলম বলেন, এখন ক্রেনবিহীন জাহাজের জট আছে। ঈদের আগে আমদানির হার বাড়ায় জাহাজ কোম্পানিগুলো সাময়িক ভিত্তিতে ক্রেনবিহীন জাহাজের সংখ্যা বাড়িয়েছে। এ জন্য এখন ক্রেনবিহীন জাহাজের সংখ্যা কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে তাদের। তবে জেনারেল কার্গো বার্থ-জিসিবির ছয়টি জেটিতে এখন ক্রেনযুক্ত জাহাজগুলোকে এক–দুই দিনের বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয় না। আগামী সপ্তাহে কোনো ধরনের জাহাজের জট থাকবে না। বরং সীমিত অবকাঠামো নিয়ে বন্দর সবচেয়ে বেশিসংখ্যক কনটেইনার পরিবহন করছে।
বন্দর কর্মকর্তারা জানান, বন্দরে একসঙ্গে সর্বোচ্চ ১১টি কনটেইনার জাহাজ ভেড়ানোর জেটি সচল রয়েছে। এর বিপরীতে বন্দরে এখন ২৪-২৫টি জাহাজ অবস্থান করছে। রোজার ঈদের পর একসঙ্গে সর্বোচ্চ ৩৭টি জাহাজ অবস্থান করেছিল বন্দর জলসীমায় ও জেটিতে। পর্যাপ্ত জেটি নির্মাণ করা ছাড়া এই সংকট দূর করা সম্ভব নয়।
তৈরি পোশাকশিল্পমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক কাজী মাহবুব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, জাহাজ আসার পরও পণ্য হাতে পেতে বিলম্ব হলে পোশাক রপ্তানিকারকদের সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়। কারণ, নির্দিষ্ট সময়ে কাঁচামাল এনে পণ্য তৈরি করে রপ্তানি করতে হয়। বন্দরে এখন ক্রেনবিহীন জাহাজের জট সবচেয়ে বেশি। বন্দরও তার সীমাবদ্ধতা নিয়ে চেষ্টা করছে। কিন্তু এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
বন্দরের তথ্যে দেখা যায়, ক্রেনবিহীন জাহাজের কনটেইনার ওঠানো-নামানো করার জন্য বন্দরে জেটি আছে দুটি। অথচ এখন চট্টগ্রাম বন্দর রুটে ক্রেনবিহীন জাহাজ চলাচল করছে নয়টি। এ কারণে এ ধরনের জাহাজের জট বেশি। যেমন, সিঙ্গাপুর বন্দর থেকে ‘এমভি কোটা ওয়াংসা’ জাহাজটি বন্দর জলসীমায় আসে ১১ জুলাই। ক্রম অনুযায়ী জাহাজটি জেটি বরাদ্দ পায় ২২ জুলাই। সাগরে ১১ দিন অপেক্ষা করলেও জাহাজটি কনটেইনার ওঠানো-নামানোয় সময় লাগে তিন দিন।
ক্রেনবিহীন জাহাজ ছাড়াও অপেক্ষাকৃত বড় আকারের জাহাজেও সময় লাগছে বেশি। বন্দর কর্তৃপক্ষ এখন সর্বোচ্চ ১৯০ মিটার লম্বা এবং ৯ মিটার ড্রাফটের (জাহাজের পানির নিচের অংশের দৈর্ঘ্য) জাহাজ আনার সুযোগ করে দিয়েছে। ফলে কোম্পানিগুলো এখন একসঙ্গে বেশি কনটেইনার আনার জন্য বড় আকারের জাহাজের দিকে ঝুঁকছে। এ ধরনের জাহাজ ভেড়ানোর সুবিধা আছে নিউমুরিং টার্মিনালের জেটিতে। কিন্তু জাহাজ আসছে ধারণক্ষমতার বেশি। যেমন, সিঙ্গাপুর থেকে ‘এমভি ইউবেনা’ জাহাজটি বন্দর জলসীমায় আসে ১৪ জুলাই। জেটিতে ভেড়ার অনুমোদন সাদ দিন পর ২২ জুলাই।
পুরোনো টার্মিনাল জিসিবিতে ছয়টি কনটেইনার জাহাজ ভেড়ানোর সুযোগ আছে। এসব জেটিতে অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের জাহাজ ভেড়ানো হয়। এই ধরনের জাহাজ আসার সংখ্যা কিছুটা কম। ফলে জট থাকলেও অন্য দুটি টার্মিনালের চেয়ে কম।
বন্দর কর্মকর্তারা জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বন্দর থেকে চট্টগ্রামমুখী কনটেইনার আনা-নেওয়া হয় সিঙ্গাপুর, কলম্বো, পোর্ট কেলাং ও তানজুং পেলেপাস বন্দরের মাধ্যমে। এর মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ কনটেইনার আনা-নেওয়া হয় সিঙ্গাপুর বন্দরের মাধ্যমে।
No comments:
Post a Comment