Saturday, July 23, 2016

যন্ত্রপাতি নয়, এসেছে দামি গাড়ি ও আসবাব !

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) জন্য ১১শ' কোটি টাকা ব্যয়ে ৬১টি যন্ত্রপাতি কিনতে নেওয়া হয় 'প্রকিউরমেন্ট অব ইকুইপমেন্ট ফর নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল' শীর্ষক প্রকল্প। তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের আড়াই বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত বন্দরে আসেনি একটি যন্ত্রপাতিও। অথচ প্রকল্পের অর্থে তিনটি দামি গাড়ি, একসেট আসবাব ও কম্পিউটার সামগ্রী কিনে ফেলেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ৭০ লাখ টাকা মূল্যের একটি জিপ, সাড়ে ৩৮ লাখ টাকায় একটি মাইক্রোবাস ও ৪৮ লাখ টাকায় একটি ডাবল কেবিন পিকআপ কিনে ব্যবহারও শুরু করেছেন তারা। যন্ত্রপাতি না কিনে গাড়ি ও আসবাব কেনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।




জিপগাড়িটি বন্দরের সাবেক চেয়ারম্যান ব্যবহার করে সপ্তাহ দুয়েক আগে জমা দিয়েছেন বন্দরে। আসবাব ও কম্পিউটার সামগ্রী ব্যবহার করছেন প্রকল্প পরিচালক বন্দরের প্রধান প্রকৌশলী (যান্ত্রিক)। অন্য দুটি গাড়ি দিয়ে আনা-নেওয়া করা হচ্ছে বন্দরে আসা ভিআইপিদের।


এ প্রসঙ্গে বন্দর পতেঙ্গা আসনের সাংসদ ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সদস্য এম এ লতিফ বলেন, 'এনসিটির যন্ত্রপাতি কেনার নামে অনেক নাটক হয়েছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ১১শ' কোটি টাকা ব্যয়ে যন্ত্রপাতি কিনতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করে। সংসদীয় কমিটির হস্তক্ষেপে তারা নিবৃত হয়। এখন দেখছি যন্ত্রপাতি কেনার প্রকল্প দেখিয়ে গাড়ি, ফার্নিচার কিনে আনা হয়েছে। এগুলো ভাগবাটোয়ারা করে ব্যবহারও করছেন তারা। যন্ত্রপাতি কেনার আগে এভাবে গাড়ি, ফার্নিচার কিনে আরেক ধরনের অনিয়ম করেছেন তারা।' প্রকল্প পরিচালক ও বন্দরের প্রধান প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) নজমুল হক বলেন, 'প্রকল্পেই গাড়ি ও ফার্নিচার কেনার অনুমোদন ছিল।

আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে যন্ত্রপাতি আসতে দেরি হচ্ছে। গাড়ি ও ফার্নিচার কিনতে জটিলতা না থাকায় নির্ধারিত সময়ে এগুলো বন্দর কর্তৃপক্ষ কিনতে পেরেছে।' প্রকল্পের গাড়ি ও ফার্নিচার কোথায় ব্যবহৃত হচ্ছে- প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'বন্দরের নিয়ম অনুসরণ করে গাড়িগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। ফার্নিচার ও কম্পিউটার সামগ্রী আমার কার্যালয়ে ব্যবহার হচ্ছে।'

জানা গেছে, জিপগাড়িটি ব্যবহার করতেন বন্দরের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ। তিনি ঢাকায় নৌবাহিনীতে কর্মরত থাকায় এ গাড়ি চট্টগ্রামে তার পরিবারের সদস্যরা ব্যবহার করেছেন। ঈদের দু'দিন আগে সাবেক চেয়ারম্যান এ গাড়ি বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন। বন্দরের পরিবহন (পুল) শাখায় আছে মাইক্রোবাস ও পিকআপ। এ দুটি গাড়ি ঢাকা থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এলে ব্যবহার করা হয়। এনসিটি প্রকল্পের পরিচালক নজমুল হকের দপ্তরে গিয়ে নতুন আসবাবপত্র সজ্জিত অবস্থায় দেখা গেছে।

অভিযোগ আছে, গাড়ি নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়মনীতি থাকলেও তা মানেন না ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যান্ত্রিক বিভাগের এক প্রকৌশলী জানান, নিয়ম অনুযায়ী অন্যত্র বদলি হওয়ার তিন মাস পর্যন্ত বন্দরের সাবেক ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন। তবে বন্দরের সাবেক চেয়ারম্যান বদলি হয়েছেন ছয় মাসেরও বেশি আগে। এ ব্যাপারে বন্দরের মুখপাত্র সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলম বলেন, 'বন্দর চেয়ারম্যান দুটি গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন। বর্তমান চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল খালেদ ইকবাল একটি গাড়ি ব্যবহার করছেন। তার কোটায় অন্য গাড়িটি বন্দরের সাবেক চেয়ারম্যান ব্যবহার করেছিলেন। বন্দরের সাবেক কোনো কর্মকর্তা কত দিন গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়মনীতি নেই বলে জানান তিনি। বন্দরের যান্ত্রিক শাখার আরেক প্রকৌশলী বলেন, 'বন্দরে নতুন আসা গাড়ি বোর্ড সদস্যরা আগে ব্যবহার করেন। তাদের ব্যবহৃত গাড়ি অধীনদের পরে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়।' বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল খালেদ ইকবাল দেশের বাইরে থাকায় এ ব্যাপারে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর প্রকল্পটির অনুমোদন হয়। ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ধরা হয়। প্রকল্প অনুমোদনের আড়াই বছরে বন্দর কর্তৃপক্ষ চারটি স্ট্রাডল ক্যারিয়ার ও পাঁচটি কনটেইনার মুভারের টেন্ডার দিতে পেরেছে। তবে এসব যন্ত্রপাতি আসতে শেষ হয়ে যাবে প্রকল্পের মেয়াদ। কারণ, টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে যন্ত্রপাতি বানানোর কার্যাদেশ দিতে হয় বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে। তারা যন্ত্রপাতি বানিয়ে বাংলাদেশে পাঠাতে শেষ হয়ে যাবে প্রকল্পের মেয়াদ।

No comments:

Post a Comment