চারতলা ভবন। ঘিয়ে রঙের মধ্যে সোনালি কারুকাজ। ছাদে সুদীর্ঘ দুটি মিনার। জানালার কাচগুলো নীলাভ। সুবিশাল প্রবেশদ্বার। ভেতরে সাদা আর খয়েরিরঙা টাইলসের মেঝে। ভবনের চারপাশে গাছগাছালির ছায়া। ব্যস্ত সড়কের পাশে হঠাৎ ভবনটি দেখলে যে কেউ থমকে দাঁড়ান।
মিরপুর আনসার ক্যাম্প এলাকায় অবস্থিত নয়নাভিরাম এই ভবনটি পাইকপাড়া সরকারি স্টাফ কোয়ার্টার জামে মসজিদ। গণপূর্ত বিভাগের জায়গায় কুয়েত জয়েন্ট রিলিফ কমিটি (কেজেআরসি), বাংলাদেশ অফিস এই মসজিদটি নির্মাণ করেছে। মসজিদটি তৈরিতে সময় লেগেছে পাঁচ বছর, আর খরচ পড়েছে প্রায় ১২ কোটি টাকা। মসজিদ নির্মাণে অর্থায়ন করেছে কুয়েত আওক্বাফ পাবলিক ফাউন্ডেশন (কেএপিএফ)।
নির্বাহী প্রকৌশলী মিরপুর গণপূর্ত বিভাগের কার্যালয়ের প্রবেশপথের পাশে এই মসজিদ অবস্থিত। ২০১১ সালে মসজিদ কমপ্লেক্সের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গফুট আয়তনের অত্যাধুনিক স্থাপত্যশৈলীর মসজিদটি নামাজ আদায়ের জন্য খুলে দেওয়া হয় এ বছরের ২৫ মার্চ।
এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই জায়গাটিতে আগে একতলা একটি মসজিদ ছিল। সেই মসজিদে একসঙ্গে হাজার খানেক লোক নামাজ আদায় করতে পারতেন। অনেক দিন ধরেই কুয়েত জয়েন্ট রিলিফ কমিটি মসজিদ নির্মাণের জায়গা খুঁজছিল। একসময় আনসার ক্যাম্প এলাকায় এই জায়গাটি তারা নির্বাচন করে। মসজিদের সাবেক কমিটির সদস্যরা নতুন মসজিদ নির্মাণে উদ্যোগী হন। আলাপ-আলোচনার পরে গণপূর্ত বিভাগ মসজিদ নির্মাণের অনুমতি দেয়।গত বুধবার মসজিদে গিয়ে সাবেক কমিটির এমন দুজন সদস্যকে পাওয়া যায়। তাঁরা মসজিদ নিয়ে অনেক কথা বললেও নিজেদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। তাঁরা বলেন, ‘আল্লাহর ঘর নির্মাণে কাজ করেছি। নিজেদের কোনো প্রচার আমরা চাই না। মানুষ শান্তিতে নামাজ পড়বে, তাতেই আমাদের শান্তি।’
কেজেআরসি বাংলাদেশ অফিস থেকে জানা যায়, ৬২ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত বৃহদাকার এ মসজিদে একসঙ্গে প্রায় ৫ হাজার ৫০০ লোক নামাজ আদায় করতে পারেন। নারীদের নামাজের আলাদা ব্যবস্থা আছে। মসজিদ কমপ্লেক্সে রয়েছে তিনটি সিঁড়ি। প্রতি তলায় আলাদা অজুখানা। ১৩০ ফুট উচ্চতার দুটি দৃষ্টিনন্দন মিনার এবং একটি মনোরম গম্বুজ। এ ছাড়াও আছে পাঠাগার, শৌচাগার, ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের থাকার ব্যবস্থা।
বেশ দূর থেকেই মসজিদের মিনার দুটি নজর কাড়ে। মসজিদের চারপাশে খয়েরি টাইলস আর লোহার শিকের বুকসমান প্রাচীর। চত্বরে পরিকল্পিতভাবে লাগানো ঘাস। আছে নানান ধরনের গাছ। নিচতলার ছাদ বেশ উঁচু। মাথার ওপরে ঘুরছে ফ্যান। সব মিলিয়ে বেশ শান্ত পরিবেশ। সামনের সদা ব্যস্ত সড়কের কোলাহল যেন স্পর্শ করে না মসজিদটিকে।
এলাকার লোকজন জানান, উদ্বোধন হওয়ার পর থেকেই লোকজনের আগ্রহের কেন্দ্রে মসজিদটি। সামনের সড়ক দিয়ে যাঁরাই চলাচল করেন, সবাই আগ্রহভরে তাকিয়ে থাকেন। অনেকেই দেখতে আসেন। শুক্রবার জুমার নামাজে মসজিদ ভরে যায় মুসল্লিদের উপস্থিতিতে। বর্তমানে গণপূর্ত বিভাগ মিরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলীকে সভাপতি করে গঠিত ১১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির তত্ত্বাবধানে মসজিদের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে বলে জানা গেছে।
কুয়েত জয়েন্ট রিলিফ কমিটি বাংলাদেশ অফিসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আবদুল হালিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ও কুয়েতের ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নিদর্শন এই মসজিদ। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে ভালোবাসা ও শান্তির বার্তা প্রচারের কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হবে মসজিদটি।’
Pages
▼
▼
No comments:
Post a Comment